ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন সীমান্তে নিহত কামাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন সীমান্তে নিহত কামাল

নওগাঁ: বিধবা মা, শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাই এবং স্ত্রী মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সীমান্তে নিহত কামাল হোসেন (৩২)।

নওগাঁর পোরশা উপজেলার চক বিষুপুর কাটাপুকুর গ্রামের মৃত জন্নুর রহমানের ছেলে কামাল। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে পুরো দায়িত্ব পড়ে তার ওপর।

কখনো কৃষি কাজ আবার কখনো মানুষের বাড়ি কামলা খেটে সংসার চল তার। বাড়িতে স্বামীরা হারা বৃদ্ধ বিধবা মা, শারীরিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই, স্ত্রী আর চার বছরের ছোট্ট মেয়েসহ সবার খরচ টানতেন কামাল।

গত ২৩ জানুয়ারি সকালে নিতপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে জীবনের ইতি টানতে হয় কামালকে। সেদিন বিএসএফের বুলেটে কামালসহ একই গ্রামের মফিজুল (৩৫) এবং সনজিত (২৫) নামে আরও দু’জন নিহত হন। গুলি করে হত্যার পর কামাল এবং সনজিতের মরদেহ ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ। আর মফিজুলের মরদেহ ফেলে যায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পোরশা উপজেলার হাপানিয়া সীমান্তের শূন্য রেখায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের পর অন্য দু’জনের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।

সীমান্তে নিহত সনজিত, মফিজুল ও কামাল পতাকা বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ১৬ বিজিবির লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম এবং বিএসএফের পক্ষে ১৫৯ বিএসএফের কমান্ডেন্ট সিও জোশি হর্সি।

এদিকে বুকের মানিক, কলিজার ধন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় কামালের মা কমেলা খাতুন।  

কমেলা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, কামালকে হারিয়ে আমরা একেবারে পথে বসে গেলাম। পরিবারের রোজগার করার মতো কেউ নেই, কিভাবে চলবে এখন আমার সংসার। আমার ছেলে গরু ব্যবসায়ী নয়। এসব কাজ আমার ছেলে কোনো দিনই করেনি। বিএসএফ ভুল করে গুলি করে আমার ছেলেকে মেরেছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই।

নিহত কামালের মামা আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, গরু নিতে নয়, আমার ভাগিনা মাঠে খেত দেখতে গেছিলো। ঘটনার দিন সকাল ৬টার দিকে কালাম মাঠে যায়। এসময় কুয়াশার ভেতরে বিএসএফ কিছু বুঝতে না পেরে তাদের গুলি করে হত্যা করে। পরে মফিজুলের মরদেহ বাংলাদেশের সীমান্তে ফেলে ওই দু‘জনের মরদেহ ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ। কামালের মতোই ওই দুই পরিবারের একই অবস্থা। তারাও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

নওগাঁ ১৬ বিজিবির সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পতাকা বৈঠকে বিএসএফের উদ্দেশ্যে সীমান্তকে শান্ত রাখার কথা বলে হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে বিষয়ে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা সীমান্তে শান্তি চাই।

** নীতপুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে ৩ বাংলাদেশি নিহত
** ২ বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দেয়নি বিএসএফ
** দুই বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত আনতে কার্যক্রম শুরু
** দেশে ফিরলো দুই বাংলাদেশির নিথর মরদেহ

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।