রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০' উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের কথা উঠে এসেছে।
এর আগে বঙ্গবন্ধুর লেখা বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২) ও কারাগারের রোজনামচা (২০১৭) বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তার জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যায়ক্রমে ১০০টি নতুন বই প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’।
বইটি ১৯৫৪ সালে লেখা বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৫২ সালে 'শান্তি সম্মেলনে' যোগ দিতে চীন সফর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সফর নিয়ে পরে বই লেখেন বলেও জানান তিনি।
ওই শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
বইটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সাধারণত কেউ সম্মেলনে গেলে সে সম্মেলন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এ বইয়ে আমরা দেখেছি তিনি যেমন শান্তি সম্মেলনের বিবরণ এখানে দিয়েছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের বিবরণ দিয়েছেন, সেই সঙ্গে নয়াচীনের মানুষের অবস্থাটা কী? তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, তাদের ভেতরে কী পরিবর্তন এলে, সরকার কী কী করেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথাই তিনি বলেছেন এবং একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে জীবন-যাপন করে তা তিনি দেখতে গিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) একজন পর্যটকই শুধু না, তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন, সমালোচনা করেছেন, কাজেই সমালোচক হিসেবে আমরা পাই, পর্যবেক্ষক হিসেবে পাই, পর্যটক হিসেবে পাই।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাসকদের হাতে প্রায় আড়াই বছর কারাগারে বন্দি থাকার পর তিনি তখন সেখানে যান। ... নানা, অত্যাচার নির্যাতনের পরও তিনি যখন নয়াচীনে যান, কীভাবে চীন বদলাচ্ছে সেগুলো যেমন গভীরভাবে দেখেছেন পাশাপাশি পূর্ববাংলার মানুষের দুরবস্থার কথা তিনি সেখানে বলেছেন।
বঙ্গবন্ধু একটা গুণ বিশেষভাবে নজর কেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটা দিক খুব বিশেষভাবে আমার নজরে আসে সেটা হলো একজন রাজনৈতিক নেতা এত নির্যাতিত হয়েছেন, এত অত্যাচারিত হয়েছেন পাকিস্তানি শাসক দ্বারা, কেবল তিনি এই নির্যাতন ভোগ করে বিদেশে গেলেন কিন্তু সেখানে যেয়ে পাকিস্তানি শাসকরা যে তাকে এত অত্যাচার করেছে, এত কিছু করেছে সে কথা তিনি কিন্তু কারো কাছে বলেননি। বরং তিনি বলেন আমাদের দেশে যা হচ্ছে, হচ্ছে কিন্তু আমরা বিদেশে এসে দেশের বদনাম করতে পারি না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন দেখি আমাদের দেশের অনেকে বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করতে গিয়ে আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে যা না ঘটে তা যেন আরও বেশি করে বলে। বঙ্গবন্ধু কত দূরদর্শীসম্পন্ন, সহনশীল ছিলেন তিনি বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম করেননি- ভাবতে অবাক লাগে।
চীন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ বাণীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু যে ভবিষ্যৎ বাণীটা করেছেন আজ চীন কিন্তু ঠিক সে জায়গায় আস্তে আস্তে উন্নতি করেছে।
'অমর একুশে গ্রন্থমেলা' উদ্বোধনের পাশাপাশি এ অনুষ্ঠান থেকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এবছর ১০ জন কবি-সাহিত্যিককে পুরস্কৃত করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।
উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২০
এমইউএম/এএ