মোজাফফর শ্বাসকষ্ট ও যক্ষ্মা সমস্যায় ভুগছিলেন। আটকের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযোগ ওঠায় সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার।
নিহত মোজাফফরের বড়ভাই আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে জানান, পুলিশের অবহেলায় মোজাফফরকে জীবন দিতে হলো। মোজাফফর শ্বাসকষ্টসহ যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। এরপর থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসের পরামর্শ উপেক্ষা করে মাত্র ১৫ মিনিট প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাত সাড়ে ১২টায় ফের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মোজাফফরকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিলেও পুলিশ কুড়িগ্রাম হাসপাতালেই ভর্তি করে। সেখানে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন মোজাফফরের স্বজনরা।
ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম জানান, পুলিশ রাত সাড়ে ১১টায় মোজাফফর নামে এক যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পনের মিনিট পরেই পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১২টায় ফের অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস সজীব জানান, ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় রাত সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ।
ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির জানান, আটক মোজাফফর এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী এবং মাদক পাচারকারী। রোববার রাতে গাঁজাসহ তাকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মোজাফফর শ্বাসকষ্ট ও যক্ষ্মারোগে ভুগছিলেন। আটকের পর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না।
কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মেনহাজুল আলম জানান, তিনি সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত ব্যক্তির পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন মোজাফফর যক্ষ্মা ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় পুলিশের কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিলো কিনা তা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২০
এফইএস/ওএইচ/