ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৃত্যুর মিছিল থামাতে কোয়ারিতে হচ্ছে পুলিশ ফাঁড়ি!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০
মৃত্যুর মিছিল থামাতে কোয়ারিতে হচ্ছে পুলিশ ফাঁড়ি!

সিলেট: মৃত্যুর মিছিল থামাতে এবার পাথর কোয়ারিতে হচ্ছে পুলিশ ফাঁড়ি! পাথুরে রাজ্যের মৃত্যুকূপ খ্যাত শাহ আরেফিন টিলায় এই পুলিশ ফাঁড়ি হবে। যেখানে খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার ‘পাথর’ উত্তোলন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য নিরীহ শ্রমিক।
 

এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ কোয়ারি ধসে পাথর শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে রোববার (০২ ফেব্রুয়ারি)। কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন সংলগ্ন কালাইরাগে ইউপি মেম্বার নুরুজ্জামান গংদের কোয়ারিতেই গর্ত ধসে প্রাণ হারান শ্রমিক রুবেল আহমদ (২৬)।

এ ঘটনার পরপরই অসংখ্য শ্রমিক চাপা পড়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনও দিনভর যান্ত্রিক যান নিয়ে চাপা পড়া শ্রমিক উদ্ধারে চেষ্টা চালায়।
 
এর একদিনের মাথায় সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) মৃত্যুকূপে নিরীহ শ্রমিকদের প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য।
  
তিনি বলেন, পাথর সম্পদে ভরপুর ভোলাগঞ্জের শাহ আরেফিন ও কালাইরাগে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কোয়ারির গর্তের মালিকরা ভিন্ন পন্থায় পাথর উত্তোলন করছেন। দিনের বেলা টাস্কফোর্সের অভিযান চলায় তারা হাজারো শ্রমিক লাগিয়ে রাতের আধারে পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ কারণে একের পর এক গর্ত ধস ও শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। রাতের আধারে পাথর উত্তোলন বন্ধে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 
সোমবার ফাঁড়ি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।
 
ইউএনও আরও বলেন, পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের আগ পর্যন্ত কোয়ারি এলাকায় টাস্কফোর্সের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) কোয়ারিতে চারটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ২১টি গর্ত পানি ছেড়ে ভরাট করা হয়। এদিন বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অভিযানে ৩১টি লিস্টার মেশিন ও সাত হাজার ফুট পাইপ ধ্বংস করা হয়। যার বাজার মূল্য অনুমানিক ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা হবে।
 
এদিকে, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সজল কুমার কানু বাংলানিউজকে বলেন, মৃত্যুর ঘটনা ঠেকাতে সোমবার দিনভর কোয়ারি এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। এদিন মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে পাথর কোয়ারি এলাকা শ্রমিক শূন্য করা হয়েছে দাবি করেন তিনি।
 
সূত্রমতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিলেটের সাতটি পাথর কোয়ারিতে অন্তত ৭৮ পাথর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শুধু শাহ আরফিন টিলায় মারা গেছে অন্তত ৩০ জন, জাফলংয়ে ২১ জন, ভোলাগঞ্জে ১৩ জন, বিছনাকান্দিতে পাঁচজন, লোভাছড়ায় আটজন এবং উৎমা ছড়া কোয়ারিতে এক পাথর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০
এনইউ/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।