ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
‘তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে’ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ/ ফাইল ছবি

ঢাকা: নতুন ও পরিবর্তিত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে অনুকরণের পরিবর্তে উদ্ভাবনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। একইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ কাজে লাগানোর পাশাপাশি এর অপব্যবহার রোধে সক্ষমতা অর্জন করার তাগিদ দেন তিনি।

শনিবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২০’ উপলক্ষে উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

আবদুল হামিদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হলে আমাদের নতুন ও পরিবর্তিত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অনুকরণের পরিবর্তে উদ্ভাবনে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ফলে সৃষ্ট সব সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এর অপব্যবহার রোধে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।


‘বুদ্ধিমত্তা ও নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতার দিক থেকে আমাদের যুবসমাজ যথেষ্ট দক্ষ ও উদ্যোগী। তাই তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে এরাই দেশকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। আমাদের দেশে প্রাইভেট সেক্টর এখন যথেষ্ট শক্তিশালী ও বিস্তৃত। তাই আমি আশা করবো, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। ’

তিনি বলেন, প্রযু্ক্তি হচ্ছে উন্নয়নের বাহন। তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। এর ফলে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও অগ্রগতির অপার সম্ভাবনার পাশাপাশি বহুমুখী চ্যালেঞ্জেরও সৃষ্টি হয়েছে। নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে প্রযুক্তি দ্রুত পরিরর্তিত হচ্ছে। এমনকি অনেক প্রযুক্তি অচল হয়ে যাচ্ছে।

ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের মধ্যে ২৭টি ল্যাব স্থাপন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ২টি ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ফলে আমাদের সামনে নতুন এক শিল্প বিপ্লবের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়নেও অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তপাঠে’ করোনা-বিষয়ক ১০টি ই-লার্নিং কোর্সে প্রায় ৪ লাখ প্রশিক্ষণার্থী অনলাইন কোর্সে অংশ নিয়েছেন এবং প্রায় ৫০ হাজার চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশে ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে ২ হাজার ৫০০ এর বেশি স্টার্টআপ রয়েছে যাদের মাধ্যমে দেশে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে এবং প্রায় ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

আবদুল হামিদ বলেন, সরকারি তথ্যের সুরক্ষা এবং সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও তদন্তের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব এবং সাইবার ডিফেন্স প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ডিজিটাল অপরাধ সংক্রান্ত মামলা তদন্তের সুবিধার্থে আলামত সংরক্ষণ ও অনলাইনে অপরাধী তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্তকরণের লক্ষ্যে ডিজিটাল এভিডেন্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিপোর্টিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার সরকারি সেবাকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ থেকে ইতোমধ্যে ৯৬৪টি সেবা ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা হয়েছে এবং আরও ১ হাজার ৮৬টি সেবা রূপান্তরের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, মাই গভ (My Gov) প্লাটফর্মে সরকারি দপ্তরের ৩৩০টি সেবা দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় তথ্য বাতায়নে ৫১ হাজার সরকারি অফিস এবং ৮৫ লাখ প্রয়োজনীয় কনটেন্ট সংযুক্ত আছে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তির সুফলের কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, করোনাকালে সারাদেশে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রায় ৭২ লক্ষাধিক পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। সারাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, মনিটরিং এবং সেবা প্রক্রিয়া জোরদার করতে ১০টিরও অধিক ড্যাশবোর্ড এবং করোনা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। এ উদ্যোগগুলোর ফলে একদিকে যেমন রক্ষা করা গেছে অমূল্য জীবন আরেকদিকে চালু রাখা গেছে সরকারের কর্মকাণ্ড। ফলে, দ্রুততার সঙ্গে দেশকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে।


মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নতুন প্রজন্মের কাছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তুলে ধরতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মুজিববর্ষের ওয়েবসাইট তৈরি, ঐতিহাসিক ও স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহের আর্কাইভ তৈরিসহ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের হলোগ্রাফিক প্রজেকশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ‘ছয় দফা হতে স্বাধীনতা’ অডিও বুক, অডিও ভিজুয়াল, তথ্যচিত্র, টাইমলাইন, বঙ্গবন্ধু উক্তি ও ডিজিটাল কার্ড সরবরাহসহ ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে। ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুজিব’ শীর্ষক কার্যক্রমের মাধ্যমে শর্ট ফিল্ম ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।  

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুটির অডিও বুক ও অ্যাপ নির্মাণ ও প্রচার, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনঘনিষ্ঠ ১০টি বিষয়ে অ্যানিমেশন ভিডিও নির্মাণ ও প্রচার এবং বঙ্গবন্ধু ব্লগ, নিউজ ফিচার, ‘বঙ্গবন্ধু এইদিনে’ সংক্রান্ত প্রচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি  এ কে এম রহমতুল্লাহ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
এমইউএম/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।