ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বরিশালে স্কুলছাত্রীর মরদেহ নিয়ে রহস্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
বরিশালে স্কুলছাত্রীর মরদেহ নিয়ে রহস্য

বরিশাল: বরিশাল সদর উপজেলার দিনার গ্রামে হেলেনা আক্তার মুন্নি নামে পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় নতুন রহস্য দানা বেঁধেছে।

সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) পুলিশ জানাচ্ছে, আত্মহত্যা বললেও মেয়েটির স্বজনরা দাবি করেছেন, এটি হত্যাকাণ্ড, এমনকি ধর্ষণের পর মুন্নিকে হত্যা করা হয়েছে।

জানা গেছে, সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের দিনার গ্রামের ফারুক খানের বাসায় ভাড়া থাকতো মুন্নির পরিবার। তার বাবা হেলাল হাওলাদার দিনার বাজারে রিকশার গ্যারেজে কাজ করতেন এবং মা রেনু বেগম বরিশাল শহরের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদকারী কোম্পানিতে (এমইপি) কাজ করতেন। প্রতিদিন সকালে তারা কাজের উদ্দেশে বেরিয়ে গিয়ে বাসায় ফিরতেন রাত ৯টার দিকে। ততক্ষণ মুন্নি তার ৮ বছর বয়সী ছোট বোনকে নিয়ে এই সময়টা কাটাতো। কিন্তু ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নিকটস্থ খালার বাসায় যায় ছোটবোন, মুন্নিরও যাওয়ার কথা ছিল।

মুন্নির মা রেনু বেগম বলেছেন, মুন্নি আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আত্মহত্যা করলে মরদেহ ঝুলে থাকবে। কিন্তু তার হাঁটু ভাঁজ হয়ে মাটির সঙ্গে লেগেছিলো।

মুন্নির নানি আমেনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, মরদেহ নামানোর পর ওর গোপনাঙ্গে আমি রক্ত দেখেছি। তার শরীরে কাঁদা মাখানো ছিল। ঘরে তো কোথাও কাঁদা নেই। তাহলে তার শরীরে কাঁদা আসবে কোথা থেকে? 

তিনি আরও বলেন, ঘরের পেছনে একটি শুকনো নালায় (পানি চলাচলের গ্রাম্য পদ্ধতি) মুন্নির পায়ের দাগ আর তার সামনে একজোড়া জুতার দাগ স্পষ্ট হয়ে রয়েছে। কেউ ওকে (মুন্নি) ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছে বা ধর্ষণ করেছে। ও (মুন্নি) পালানোর চেষ্টা চালিয়েছে। সেখান থেকে ধরে এনে খুন করে ঝুলিয়ে রেখেছে।

মুন্নির বাবা হেলাল হাওলাদার বলেন, মুন্নির মরদেহ যেখানে ঝুলছিলৈা তার পাশে টেবিলের ওপর ভাত ও এককাপ চা ছিলো। আত্মহত্যা করলে ওর হাত-পা ছোড়াছুড়িতে ভাত ও চা পড়ে যেতো। পায়ের কাছে একটি পাটার ওপর পুঁতা (মরিচ পেষার দেশীয় যন্ত্র) দাঁড় করানো ছিলো, তাতে মুন্নির পা লেগেছিল। যদি মুন্নি আত্মহত্যা করতো তাহলে মৃত্যুর যন্ত্রণায় তার হাত-পায়ের ছোড়াছুড়িতে পড়ে যেতো। তাছাড়া ঘরের দরজা পুরোপুরি খোলা ছিলো।

হেলাল বলেন, ঘরের কোনো কিছুই স্বাভাবিক নেই। সবকিছুই অস্বাভাবিক, শুধু আমার মেয়েটি নেই।   আমার মেয়েকে কেউ খুন করে ঝুলিয়ে রেখে গেছে। আমি দেশবাসীর কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

মেট্রোপলিটন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কোনো কিছুই উড়িয়ে দিচ্ছি না। মরদেহ ময়নাতদন্তের শেষে রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর ওই গ্রামের দাফন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে উদঘাটন হবে আসলে কি ঘটেছিলো।
 
এখন পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি বলেও জানিয়ে ওসি বলেন, আমরা নিহত মুন্নির মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তারা বলেছেন কারও বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ নেই। তাহলে আমি মামলা নেবো কিভাবে?

গত শনিবার (১২ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় দিনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হেলেনা আক্তার মুন্নির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।