ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পুলিশে যুক্ত হচ্ছে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
পুলিশে যুক্ত হচ্ছে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: পুলিশকে আধুনিকায়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার। এর মধ্যে থাকবে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট, স্মল আর্মস উইথ থাই হোস্টার ও হ্যান্ডস ফ্রি কমিউনিকেশন।

এর মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের অস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বেল্টে রক্ষিত থাকবে, হাত থাকবে পরিপূর্ণ খালি। দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন আরামদায়ক হওয়ার পাশাপাশি অপারেশনাল দক্ষতা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রথম ধাপে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৭ হাজার সদস্য ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ৩ হাজার সদস্যরা এই অপারেশনাল গিয়ার পাবেন। যা পর্যায়ক্রমে সব মেট্রোপলিটনে, জেলা পর্যায়ে এবং গ্রাম পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গেও এই গিয়ার যুক্ত হবে।

মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

আইজিপি বলেন, উন্নত বিশ্বে রুটিন ডিউটিতে পুলিশ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেন না। এখন থেকে আমরাও সেই বিষয়টি প্রচলন করতে চাই। প্রথমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আগামীকাল থেকে এটি ব্যবহার করবে। এরপর ধাপে ধাপে সবক্ষেত্রে এটির প্রচলন করা হবে। আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যে ডিএমপি ও সিএমপি তাদের সদস্যদের নতুন ধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা কোনো ধরনের অস্বস্তি ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আমরা চাই না ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ একহাতে ওয়্যারলেস ধরে থাকুক, এক হাত অকোপাইড হয়ে থাকুক। নতুন গিয়ার সংযোজনের ফলে ওয়্যারলেস চলে যাবে বেল্টে। কাঁধে সংযোজিত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যরা ওয়্যারলেস ব্যবহার করতে পারবেন।
অপারেশনাল গিয়ার সংযোজনকে পুলিশের হার্ডওয়্যারগত পরিবর্তন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পাশাপাশি সফটওয়্যারগত পরিবর্তন অর্থাৎ আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। আমরা চাই পুলিশের সর্বকনিষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ পদের সদস্যদের আচরণ হবে সর্বোচ্চ অনুকরণীয়। হার্ডওয়্যারগত পরিবর্তন করে প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব না, এজন্য সফটওয়্যারগত পরিবর্তন দরকার। মনেজগতের পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা দ্রুতই নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।

রুটিন ডিউটিতে পুলিশের ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়বে এবং এর সুবিধা দেশবাসী ভোগ করবে বলে আশাবাদী তিনি।

নতুন গিয়ারে যুক্ত করতে আপাতত কোনো ক্ষুদ্রাস্ত্র আমদানি করতে হয়নি। স্টকের অস্ত্র দিয়েই এগুলো প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে। রুটিন ডিউটিতে পুলিশ সদস্যরা এই অস্ত্র সঙ্গে রাখলেও অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লং আর্মসের ব্যবহার অব্যাহত রাখবে পুলিশ।

সর্বাধুনিক এই অপারেশনাল গিয়ার চালু করার উদ্দেশ্যের বিষয়ে জানানো হয়:

১। পুলিশ সদস্যদের কর্মদক্ষতা ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে দায়িত্ব পালনকালে হাত খালি বা হ্যান্ডস ফ্রি রাখা।
২। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রুটিন দায়িত্ব পালনকালে ভারী ও বহনে কষ্টকর লং আর্মসের পরিবর্তে হালকা ও সহজে বহনযোগ্য শর্ট আর্মস ব্যবহার করা।
৩। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতে অধিক ক্যাজুয়ালটি এড়াতে অত্যাধিক ক্ষমতাসম্পন্ন লং ব্যারেল আর্মসের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনা।
৪। পুলিশ সদস্যদের দীর্ঘক্ষণ দায়িত্ব পালনকে সহজ করে কমফোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৫। উপনিবেশিক উত্তোরধিকার ধারা থেকে বেরিয়ে আসা।
৬। বিশ্বের অপরাপর আধুনিক দেশের ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা।
৭। পুলিশ ও জনগণের মধ্যে মানসিক দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং পুলিশী সেবাকে আরও সহজসাধ্য করা।

সর্বাধুনিক এই অপারেশন গিয়ার চালু করার বিশেষত্ব:  একজন পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব পালনকালে যেসব সরঞ্জামদির প্রয়োজন হয়, তার সবগুলোই এই অপারেশন গিয়ারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। জনশৃংখলা রক্ষায় পুলিশের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো এমনভাবে সংযোজন করা হয়েছে, যাতে দায়িত্বপালনকালে একজন পুলিশ সদস্য খুব সহজেই দরকারি জিনিস মুহূর্তের মধ্যেই পেয়ে যান। ট্যাকটিক্যাল বেল্টের সঙ্গে থাই হোলস্টার যুক্ত করে সেখানে স্মল আর্মস রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও বেল্টের সঙ্গে এক্সপ্যান্ডেবল ব্যাটন, টর্চলাইট, হ্যান্ডকাফ ও ওয়াটল বটল রাখার সুযোগ রয়েছে।

জরুরি মুহূর্তে দ্রুত মেসেজ আদান-প্রদান নিশ্চিত করতে ওয়ালেস সেটের সঙ্গে একটি মাইক্রোফোন ও ওয়ালেস সেট জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যরা ওয়ালেস সেট মুখের কাছে না এনেই মেসেজ আদান-প্রদান করতে পারবেন। নতুন এই অপারেশন গিয়ার চালু করায় পুলিশ সদস্যদের আগের মতো কাঁধে বা হাতে করে অস্ত্র বহন করতে হবে না। হাত ফাঁকা থাকায় জনগণের যেকোনো প্রয়োজনে দুই হাত ব্যবহার করেই সহযোগিতার জন্য এগোতে পারবেন পুলিশ সদস্যরা। এছাড়াও সর্বাধুনিক এই অপারেশন গিয়ার বাংলাদেশ পুলিশকে একটি স্মার্ট লুক এনে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
পিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।