ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের জনতার ঢল

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২০
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের জনতার ঢল

সাভার স্মৃতিসৌধ থেকে: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের জনতার ঢল নেমেছে। স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন তারা।

বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা ৩৮ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এরপর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ। এসময় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দেওয়া পুষ্পাঞ্জলির ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদি। করোনা উপেক্ষা করেই লাখ মানুষের ঢল নামে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে। এবার শ্রদ্ধা জানাতে এসে করোনা থেকে মুক্তি ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয় জানায় সর্বস্তরের মানুষ।

নগরীর কমার্স কলেজ এলাকা থেকে সাভার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন নাবিল আহমেদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালীন সময়ে ঘর থেকে বের হওয়া দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতো মানুষ কষ্ট ও ঝুঁকি নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসবে ভাবতে পারিনি। তারপরও মনে হয় আমাদের অনুভূতির জায়গাটা প্রবল। শ্রদ্ধাবোধ শক্ত। প্রবল অনুভূতি থেকে শ্রদ্ধাবোধ জানাতে এসেছি। শ্রদ্ধাবোধ জানাতে না এলে মানসিকভাবে শান্তি পেতাম না। এবারের আমাদের একটাই চাওয়া-পাওয়া করোনার থাবা থেকে দেশ মুক্তি পাক। মানুষ ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাক। ’

নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য পরিবার-পরিজনকে নিয়ে অনেকে সাভার স্মৃতিসৌধে এসেছেন। রাজধানীর মিরপুর পল্লবী থেকে সপরিবারে সাভারে এসেছেন আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সপরিবারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভার এসেছি। সন্তানদের জানার দরকার শহীদ দিবস, বিজয় ও ভাষা দিবস কি? পৃথক পৃথক দিবসগুলোর তাৎপর্য বোঝানোর জন্যই সবাইকে নিয়ে এসেছি। করোনা নিয়ে মধ্যে একটা অজানা আতঙ্ক আছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, করোনা থেকে সবাইকে রক্ষা করুন। ’

সাত বছরের বাচ্চা মাহীকে নিয়ে গাজীপুর থেকে এসেছেন নূর নবী আহমেদ। তিনি বলেন, দেশটা হোক শান্তির, করোনামুক্ত হোক বাংলাদেশ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো খুবই জরুরি।

করোনা মহামারির কারণে এবারের বিজয় দিবস এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। করোনা সংক্রমণের কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাভার স্মৃতিসৌধে প্রবেশমুখেই মাস্কা পরা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য সচেতন করা হচ্ছে। এ জন্য শতাধিক স্বোচ্ছাসেবক কাজ করছেন। অধিকাংশ রাজনীতিবিদেরা মৌলবাদ সমূলে উৎপাটন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে দেশে একদিকে সাম্প্রদায়িকতা, আরেকদিকে অসাম্প্রদায়িকতার দু’টি ধারা চলছে। একদিকে ৪৭ এর চেতনা, অন্যদিকে ৭১ এর চেতনা। বিজয়ের এ দিনে আমাদের শপথ হবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যে বিষবৃক্ষ, ডাল-পালা বিস্তার করেছে, সেই বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন করে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করাই আমাদের অঙ্গীকার। ’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিনষ্ট করার যে আশা নিয়ে ঘাতকের দল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, তাদের সে স্বপ্ন সত্যি হয়নি। যে স্বপ্ন দেখে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন জাতির জনকের নেতৃত্বে, সে স্বপ্ন নতুন প্রজন্ম তুলে নিয়েছে। তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

দেশ স্বাধীন হলেও গণতন্ত্রের মুক্তি মেলেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি বলেন এখনও আমাদের গণতন্ত্রের মুক্তি মেলেনি। সেই মুক্তির জন্যই আমরা সংগ্রাম করছি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

করোনাকালেও ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। বিভিন্ন সংগঠনের মধ্য কৃষক লীগ, যুবলীগ, এফবিসিসিআই, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাসদ, বাসদ ও ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব ড্যাব ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

বিজয় দিবস উদযাপনে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শতাধিক সদস্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২০
এমআইএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।