ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক পরামর্শকের মাসিক বেতন ২০ লাখ!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
এক পরামর্শকের মাসিক বেতন ২০ লাখ!

ঢাকা: ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (প্রথম সংশোধন) শীর্ষক সংশোধিত সমীক্ষা প্রকল্পের পরামর্শকদের টিম লিডার লি জাং হা। তিনি কোরিয়ান নাগরিক।

তার মাসিক বেতন ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।

এছাড়া ট্রান্সপোর্ট ইকোনমিস্ট, জিও টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার, ইনভায়রনমেন্টাল স্পেশালিস্ট, হাইড্রোলজিনস্ট, সিগন্যাল ইঞ্জিনিয়ার, টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার ও স্ট্রোক স্পেশালিস্টদের জন্য প্রতি মাসে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।  

সাধারণত অর্থায়নকারী বৈদেশিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান, দেশের প্রস্তাব ও শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক সহায়তা প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শকদের বেতন ভাতা হয়ে থাকে। কিন্তু  সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য বৈদেশিক পরামর্শকদের বেতন ভাতা অত্যাধিক বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বিদেশি পরামর্শকদের বেতন-ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে হ্রাস ও স্থানীয় পরামর্শকদের বেতন ভাতা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ /পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী নির্ধারণ করা বিষয়ে একমত পোষণ করে কমিশন।

তারপরও বিশাল অংকের পরামর্শক ব্যয় রেখেই টাকা। চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ‘বিশদ নকশা প্রণয়ন ও দরপত্র দলির প্রস্তুতসহ ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) হতে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (প্রথম সংশোধন)‘ শীর্ষক সংশোধিত সমীক্ষা প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন।  

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক সেবা ব্যয় ১৬ কোটি ২২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এছাড়া বিজ্ঞাপন খাতে ৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। গাড়ি ভাড়া বাবদ ৩৩ লাখ ১৫ হাজার, অফিস স্টেশনারি ও অন্যান্য খাতে ৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সম্মানী খাতে ৮, ভ্রমণ ভাতা ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অফিস উপকরণ খাতে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এক পরামর্শকের মাসিক বেতন ১৯ লাখ ৪৯ হাজার নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশি পরামর্শকদের বেতন কাঠামো অনেক বেশি। সেই ধারাবাহিকতায় এই প্রকল্পে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে পরামর্শক ব্যয় এতো বেশি হওয়া উচিত নয়। প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় কমানো উচিত।  

যোগ্যতার কারণেই এক পরামর্শককে বেশি টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পের পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যোগ্যতার কারণেই কোরিয়ান পরামর্শককে এতো টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। তবে টেকনলজি ট্রান্সফার হচ্ছে। আশা করছি আমাদের ছেলেরাও একদিন এসব কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করবে। তখন আর বেশি টাকা দিয়ে বিদেশি পরামর্শক রাখার প্রয়োজন হবে না।

তিনি আরও বলেন, ২১ সালের মধ্যেই সমীক্ষা সম্পন্ন হবে। এর পরেই মূল প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ভাঙ্গা-পায়রা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপনে অ্যালাইমেন্ট নির্ধারণ, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও সেফগার্ড পলিসি সমীক্ষা সম্পাদন, প্রকল্পের আর্থিক ও অর্থনৈতিক উপযোগিতা এবং পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব নির্ণয় করা হবে। প্রকল্পের জন্য বিস্তারিত ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং ও ডিজাইন প্রস্তুসহ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ করা হবে। প্রকল্পের জন্য দরপত্র দলিল প্রস্তুতসহ পরামর্শকদের কার্যপরিধিও লিপিবদ্ধ থাকবে।

ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপনে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-যশোর ও খুলনা অঞ্চলে যোগাযোগের দূরত্ব কমে যাবে। অন্যদিকে সরকার পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। বন্দরকে লাভজনক করতে এটিকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করে সরকার।

নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব কমে দাঁড়াবে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার এবং ভ্রমণে সময় লাগবে মাত্র ৪ ঘণ্টা। ২০২১ সালের জুনে সমীক্ষা শেষে মূল প্রকল্প নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হবে। সমীক্ষা প্রকল্পের প্রধান কাজ দুটি। প্রথমটি হচ্ছে— বিশদ ডিজাইন ও দরপত্র দলিল প্রণয়নসহ ফরিদপুর থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কাজ করা। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে— গাণিতিক মডেলে বিস্তারিত টপোগ্রাফি সার্ভে, হাইড্রোলজিক্যাল এবং মরফোলজিক্যাল স্টাডি। দুটি কার্যক্রম ছয়টি প্যাকেজে সম্পন্ন হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।