ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যে অফিসে গান গাওয়া হয়!

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
যে অফিসে গান গাওয়া হয়! কর্মীরা গান শুনছেন। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী থেকে: কর্মক্ষেত্র নিয়ে ইংরেজিতে একটা কথা আছে– ‘অফিস স্ট্রেস’। অফিসে দায়িত্বপালনের সময় কর্মীর ওপর যে মানসিক চাপ ও একঘেঁয়েমি চলে আসে, সেটিকেই সহজ অর্থে বলা হচ্ছে ‘অফিস স্ট্রেস’।

রাজশাহী বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক কার্যালয়ে এমন একটি অফিস আছে, যেখান কর্মীদের এই স্ট্রেস নিরসনে আছে গান গাওয়ার ব্যবস্থা।

সম্প্রতি সরেজমিনে হাইটেক পার্কের বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থিত আইটি স্টার্টাপ এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। পরিদর্শনকালে ফ্লিট বাংলাদেশ নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোরে হঠাৎ করেই ভেসে আসে মিনারের ‘সাদা রঙের স্বপ্নগুলো’ গানটি।

অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, ফ্লিট বাংলাদেশেরই এক কর্মকর্তা গিটার হাতে গান গাইছেন। পরনে ব্লেজার, ফরমাল শার্ট-প্যান্ট আর টাই। এর মধ্যেই সুরেলা গলায় গান গাইছেন এলান নরকেক নামের ঐ কর্মকর্তা।

রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে পড়াশুনা শেষ করা এলানের ক্যারিয়ারের প্রথম কর্মস্থল ফ্লিট বাংলাদেশ। অফিসের পরিবেশ নিয়ে এলান বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু এটা একটা আইটি প্রতিষ্ঠান, সেহেতু এখানে প্রচুর কাজ করতে হয়। বিদেশি গ্রাহক আছে তাই বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সময়ের সাথে মিল রেখে কাজ করতে হয়। এর ফলে প্রচুর স্ট্রেস হয়ে যায়। কিন্তু এই অফিসে কর্মীদের স্ট্রেস দূর করার জন্য সৃজনশীল অনেক কিছু করা হয়। এই যেমন আমি গান গাইলাম। কেউ হয়তো হঠাৎ করেই একটা জোকস বলে দিল। সবাই হেসে উঠল; পুরো টিম আবার চাঙ্গা হয়ে গেল।

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু ফ্লিট বাংলাদেশই না, বরং এখানকার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের অফিসেই এমন কিছু ‘ইনোভেটিভ’ কাজ করা হয়। আর এগুলোতে অংশ নেন প্রতিষ্ঠানেরই সদস্যরা। কর্মীদের মানসিকভাবে উজ্জীবিত রাখতে, তাদের সৃজনশীলতা থেকে প্রডাক্টিভিটি বাড়াতেই এমন আয়োজন। আর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে হাইটেক পার্কের শেখ কামাল আইটি সেন্টার অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ভবনের নকশা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার্স ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির মহাসচিব এবং টেক রাজশাহী নামক আইটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু এগুলো মূলত আইটি প্রতিষ্ঠান তাই এখানকার কর্ম পরিবেশ এমন হতে হবে যার ফলে কর্মীরা তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করার সুযোগ পায়। এখানে একটা ‘চিল’ বা ‘কুল’ টাইপ পরিবেশ থাকতে হবে। এই হাইটেক পার্কসহ দেশের সব হাইটেক পার্কগুলোতে এই বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে দেখবেন প্রতিটি ফ্লোরে প্রশস্ত লবি রয়েছে। মনে করুন কোন একজন কর্মীর অফিসে ভালো লাগছে না। এক কাপ কফি হাতে এই লবিতে দাঁড়ালে চোখের সামনে থাকবে সবুজের সারি আর তারপরে সুবিশাল পদ্মা। মন ভালো হতে বাধ্য। কিছুক্ষণ এমন পরিবেশে দাঁড়ালে আপনি ভেতর থেকে ‘রিচার্জড’ হবেন এবং কাজে নতুন করে মনোনিবেশ করতে পারবেন। এখানে বারান্দায় সুন্দর দোলনা আছে। আপনি একটু বাতাসের সঙ্গে দোল খান। এখানকার অফিসগুলোর টিম মিটিং বা বোর্ড মিটিং অনেক সময়েই চার দেয়ালে হয় না। চা বা কফি হাতে লবিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড় বড় মিটিং হয়ে যায়। হয়তো লাখ লাখ টাকার বিজনেস মিটিং এর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত চুল ওড়ানো নির্মল বাতাসে হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে এখন পর্যন্ত ১০টি আইটি প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টাপ তাদের অফিস স্থাপনের অনুমতি পেয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে নিজেদের কাজ শুরু করেছে। এখানে দুই শতাধিক কর্মী বর্তমানে কাজ করছেন। লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে ১৪ হাজার তরুণ তরুণীর কর্মস্থল হবে এই হাইটেক পার্ক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
এসএইচএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।