ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কুড়িগ্রামে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরানো নিয়ে বিভ্রান্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২০
কুড়িগ্রামে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরানো নিয়ে বিভ্রান্তি

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কের ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ নির্মিত একটি সীমানা ফলক থেকে প্রায় এক বছর আগে সরানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। এ ঘটনায় জেলায় নতুন করে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

ম্যুরাল আখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনও বিব্রত। প্রকৃতপক্ষে ম্যুরাল নয়, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরিয়ে নেওয়া হয় সরকারি নির্দেশনায়।  

জানা যায়, লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে সীমানা ফলকটি নির্মাণ করা হয়। ফলকটির একদিকে ‘স্বাগতম ভিতরবন্দ ইউনিয়ন’ এবং অন্যদিকে ‘খোদা হাফেজ ভিতরবন্দ ইউনিয়ন’ লিখে উভয়দিকে ‘বাল্য বিবাহকে না বলুন’ স্লোগান লেখা হয়।

এছাড়াও ফলকের উভয় দিকের শীর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৬ ইঞ্চি বাই ২৪ ইঞ্চি সাইজের টাইলসের উপর ছাপানো ছবি (প্রতিকৃতি) লাগানো হয়। এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পত্রের নির্দেশনায় টাইলসের বঙ্গবন্ধুর ছবি ফলকের উভয় দিক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

প্রকল্পের সভাপতি ও ভিতরবন্দ সংরক্ষিত ইউপি সদস্য আছমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, এটি ম্যুরাল নয়, টাইলসের উপর ছবি। চেয়ারম্যানসহ আমরা ভালোবেসে ও শ্রদ্ধা জানাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এলজিএসপির প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। পরে এলজিএসপির কুড়িগ্রামের ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলেটর ফারুক আহমেদ সরকারি নির্দেশনা দেখিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি যেখানে সেখানে লাগানো যাবে না। এতে বঙ্গবন্ধুর অবমাননা হবে। আর এই প্রতিকৃতি না সরালে প্রকল্পের বিল ছাড় করা হবে না। তাই বাধ্য হয়ে সরকারি নির্দেশনায় প্রতিকৃতি সরিয়ে নেওয়া হয়।  

ভিতরবন্দ ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসান আলী বাংলানিউজকে বলেন, ছবি বা প্রতিকৃতি ম্যুরাল নয়। কাজেই এ নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। আমার জানামতে প্রতিকৃতি সরানো হয়েছে প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে।  

ভিতরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বাংলানিউজকে জানান, আমি ওই ফলকের উভয় দিকে জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন করেছিলাম শ্রদ্ধা থেকে এবং ভালোবেসে। নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিচিত করতে। কিন্তু এলজিএসপি প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলেটর ম্যুরাল না সরালে প্রকল্পের বিল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। ঘটনাটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটলেও হঠাৎ করে বিভ্রান্তি ছড়ানোয় অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

কুড়িগ্রাম জেলায় কর্মরত এলজিএসপি প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলেটর ফারুক আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, যত্রতত্র জাতির পিতার ছবি স্থাপন না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্বলিত একটি চিঠি আমাদের প্রকল্প দপ্তর থেকে পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে চলতি বছর ফ্রেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়। সেই নির্দেশনা মোতাবেক ভিতরবন্ধ ইউনিয়নের সীমানা ফলক থেকে জাতির পিতার ছবি (প্রতিকৃতি) সরিয়ে নেওয়া হয়। সে মোতাবেক কাজ হওয়ায় প্রকল্পের বিল ছাড় করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আর ম্যুরাল নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠিক নয়। কোনটি ম্যুরাল আর কোনটি ছবি বা প্রতিকৃতি তা সবার জানা উচিত।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর আহমেদ মাছুম বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনা প্রায় একবছর আগের। ম্যুরাল নয়, এটি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। যা সরকারের নির্দেশনায় সরানো হয়েছে। কোনো আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রকল্পের স্বার্থে এটি করা হয়েছে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামান বাংলানিউজকে বলেন, কুড়িগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল সরানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে একবছর আগে ভিতরবন্ধ ইউনিয়নের সীমানা ফলকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের কয়েকদিনের মাথায় সরানো হয় সরকারি নির্দেশনায়। এতদিন পর এ ঘটনাকে ভুল ব্যাখা দিয়ে যেন কেউ দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২০
এফইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।