ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চুরি-হাঁড়ি ভাঙায় পেশা ছাড়ছেন গাছিরা, দোষ নগরায়নের আগ্রাসনেও!

জয়ন্ত জোয়ার্দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
চুরি-হাঁড়ি ভাঙায় পেশা ছাড়ছেন গাছিরা, দোষ নগরায়নের আগ্রাসনেও! খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি বাঁধছে চাষি। ছবি: বাংলানিউজ

মাগুরা: শীতের সকাল। ঘন কুয়াশায় ঢাকা চারদিক।

খেজুর রসের হাঁড়ির টুংটাং শব্দ। রসের মিষ্টি ঘ্রাণে ময়ময় করছে মাগুরায় নিজনান্দুয়ালী এলাকা। সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, ভূপ্রকৃতিও বদলে যায়, কিন্তু গ্রাম বাংলার এ সম্পর্ক অনন্তকাল ধরে এভাবেই বহমান। নগরায়নের আগ্রাসনে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। শুধু তাই নয় গাছির অভাবেও গাছ থেকে রস সংগ্রহের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।

নিজন্দুয়ালী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ এলাকায় রাস্তার পাশে কোনো কোনো জায়গায় কিছু কিছু খেজুর গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে রস নামাচ্ছেন গাছিরা।  

কয়েক গাছির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক সময় রাস্তার পাশে খেজুর গাছ হওয়ায় রসের হাঁড়ি হারিয়ে যায়। এ কারণে গাছ কাটার আগ্রহ হারাচ্ছে গাছিরা।  

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শীতের শুরুতেই রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ কাটা হয়। তারপর বাশের নলি কেটে কাঠি করে গেথে দেওয়া হয়। তার ঠিক নিচে দড়ি দিয়ে ঝুলানো হয় মাটির হাঁড়ি। গাছের কাটা অংশ বেয়ে রস কাঠির মাধ্যমে ফোঁটায় ফোঁটায় হাঁড়িতে এসে জমা হয়। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও মেঘলা আকাশ আর কুয়াশচ্ছন্ন সকাল খেজুর রসের জন্য উপযোগী। গাছের বয়স ৫ বছর হলেই খেজুরের রস পাওয়া যায়।
 
মাগুরা সদর উপজেলা আঠারোখাদা ইউনিয়নের মালন্দ গ্রামের বিষ্ণুপদ সরকার জানান, শীত মৌসুমে তার প্রধান কাজ ছিল খেজুর গাছ কেটে রস নামানো আর গুড় তৈরি করা। খাঁটি খেজুর গুড়ের ঘ্রাণ থাকতো পুরো শীত মৌসুম জুড়ে। বাড়িতে খেজুর রস কিনতে একদিন আগেও বায়না দিয়ে যেতো অনেকে। এখন আর খেজুর গাছ তেমন নেই। গাছ কাটলে হাড়ি হারিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে হাঁড়ি পেড়ে রস নিয়ে যায়। যে কারণে খেজুর গাছ কাটা বাদ দিয়েছি। বর্তমানে কৃষি কাজে মন দিয়েছি।
 
নিজনান্দুয়ালী গ্রামের গাছি রাজীব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার খেজুর গাছের রসের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। দামও ভাল এক হাঁড়ি রসের দাম ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। তবে খেজুর গুড়ের দাম ৩০০ টাকা কেজি। অনেকে একদিন আগে বায়না দিয়ে থাকেন রস কেনার জন্য।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেক কষ্ট করে খেজুর গাছ কেটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাছ থেকে রস নামাই। আবার কষ্ট করে রসের হাড়ি বেঁধে রাখি। রাতের অন্ধকারে অনেকে এসে পেড়ে নিয়ে খালি হাঁড়ি রেখে যায়। আবার রসের হাড়ি ভেঙে রেখে যায় অনেকে। যে কারণে পেশা বদলে অন্য পেশায় এসেছি।
 
একই এলাকার গাছি রিং হোসেন বলেন, একটা খেজুর গাছ কাটতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। গুড় তৈরি করতে অনেক খরচ হয়। চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। গাছ কাটার পর রসের হাঁড়ি পাওয়া যায় না যে কারণে অনেকে খেজুর গাছ কাটা বাদ দিয়েছে।
 
মাগুরা ক্ষুদ্র বিসিক উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, খেজুর গাছ কাটা ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্ট থাকায় এই পেশা অনেকে ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে আমরা বিসিক শিল্প সহায়ক কেন্দ্র থেকে এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। যারা এই ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা তৈরি করে  সহযোগিতা করা হবে। তবে প্রতি বছর শীত মৌসুমে খেজুর গাছেন রস ও গুড়, পাটালির চাহিদা রয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। এই পেশা যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য জন্য বিসিকের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।