ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভাইকে মেম্বার প্রার্থী বানাতেই হামিদুলকে হত্যা করেন রবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
ভাইকে মেম্বার প্রার্থী বানাতেই হামিদুলকে হত্যা করেন রবি

গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজের ভাইকে ইউপি সদস্য (মেম্বার) পদপ্রার্থী বানাতে বর্তমান সদস্য হামিদুল হককে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেন একই এলাকার বাসিন্দা রবি শরীফ।

ঘটনার পর ছায়া তদন্ত করে সোমবার (২১ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১১টার দিকে পুরান ঢাকার পাটুয়াটলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রবিউল শরীফকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।  

মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি’র ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন।

এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক সোয়া ৭ টার দিকে গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য (কাউন্সিলর) হামিদুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর গত ১৪ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-১৩) দায়ের করা হয়।  

ঘটনার পরপরই সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে প্রথমে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল (গোপালগঞ্জ ল-১১-১৪৮১) এর মালিক ও চালক আমির মোল্লাকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করে। পরে আমির মোল্লার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের মূল আসামী রবিউল শরীফ (৫৭) কে গ্রেফতারের জন্য সিআইডি যশোর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। অবশেষে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ, কারিগরি তথ্য, রুপসা ব্রিজে টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এবং মনিরের (যশোর) পেট্রোল পাম্প এর সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মূল আসামি রবি শরীফ গত ১১ ডিসেম্বর তার পূর্ব পরিচিত যশোরবাসী চশমার দোকানের মালিক আমির মোল্লাকে মোটরসাইকেল যোগে যশোর হতে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।  

মোটরসাইকেল (গোপালগঞ্জ ল-১১-১৪৮১) নিয়ে যশোর সদর হাসপাতালের সামনে আনুমানিক দেড়টার সময় তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় রবি শরীফ কালো ব্লেজার, জিন্স প্যান্ট, কালো পিকআপ এবং সাদা সার্জিক্যাল মাস্ক পরিহিত ছিলেন। সেখান থেকে তারা দুপুর ২টা ৫ মিনিটের সময় যশোরের মনিরুদ্দিন পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে যান। সেখানে তারা এক হাজার টাকা সমমূল্যের তেল নেন। রবি শরীফ ঐ টাকা পরিশোধ করে।

তিনি বলেন, এরপর গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে কালনাঘাটের একটি চায়ের দোকানে চা পান করে গোপালপুর বাজারে কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেন। এ সময় মূল আসামি মোটরসাইকেল থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলেন।

গোপিনাথপুরে হামিদুল হক এলাকার পরিচিত ভ্যানচালক সাগরকে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করে তার মায়ের জন্য ঔষধ আনতে যান। এরমধ্যে তিনি স্থানীয় মিজান মেম্বার ও পলাশ শেখের সঙ্গে গল্প করেন। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভ্যানযোগে হাইস্কুল গেটের সামনে আসেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে গোপিনাথপুর বাজার হতে একই মোটরসাইকেলযোগে রবি শরীফসহ গোপিনাথপুর হাইস্কুলের গেটের সামনে রাস্তার পূর্ব পাশে পৌঁছলে মোটরসাইকেল দিয়ে ভ্যান আটকে দেয়।  

এরপর মোটর সাইকেলে বসা রবি শরীফ ভ্যানে বসা হামিদুল হক মেম্বারকে অত্যন্ত কাছ থেকে পিস্তল দিয়ে বুকের বাম পাশে চারটি গুলি করেন। সঙ্গে সঙ্গে হামিদুল হক রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ঘটনার পর ভ্যান চালক সাগর হামিদুল হককে হাসপাতালে নিয়ে যান। হত্যার পর রবি শরীফ মোটরসাইকেল চালক আমির মোল্লাকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, যশোর যাওয়ার পথে রুপসা ব্রীজের টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরায় তাদের অবস্থানের বিষয়টি আনুমানিক রাত ৮টায় ধরা পড়ে। সেখান থেকে যশোরের দড়াটোনা মোড়ে এসে রবি শরীফ নেমে পড়েন এবং সেখানে একটি রুটি কিনে মূল আসামী রবি শরীফ আবার মোটর সাইকেলযোগে যশোরের গোপপাড়া রোডে চলে আসেন। রাত সাড়ে ৯ টার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি পুনরায় চালু করেন। হত্যাকণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি সরবরাহকারীর কাছে পুনরায় জমা দিয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে যান তারা।

হামিদুলকে হত্যা কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইমাম হোসেন বলেন, খুনিরা পেশাদার না। তবে স্থানীয় প্রভাব, এলাকায় প্রভাব-ক্ষমতা বিস্তারের জেরে হত্যা করা হয় হামিদুলকে।

তিনি বলেন, রবিউল চেয়েছিলেন নিজের ভাইকে ইউপি সদস্য বানাবেন। তবে সে পথে কাঁটা প্রভাবশালী হামিদুল। হত্যায় জড়িত অন্য আসামী আমির মোল্লা ছিলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান লাচ্চুর করা অপহরণ মামলার আসামী। আবার সম্প্রতি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন নিহত হামিদুল।

হামিদুলকে সরাতে পারলে রবি তার ভাইকে মেম্বার পদে প্রার্থী করতে পারবেন। অন্যদিকে আমির এই সুযোগে জল ঘোলা করে চেয়ারম্যানকে শায়েস্তা করতে পারবেন। সব মিলে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোর চিন্তা থেকেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় হামিদুলকে।

এই হত্যায় অন্য কারো ইন্ধন সহযোগীতা বা যোগসাজশ ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে ইমাম হোসেন বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান লাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের যোগানদাতাকে গ্রেফতার এবং অস্ত্র উদ্ধারের জোর প্রচেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা ডিসেম্বর ২২, ২০২০
এসজেএ/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।