ঢাকা: করোনা ভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন দেখা গেছে। বদলে গেছে পুরোনো বহু রীতিনীতি।
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধির পর কূটনীতির ধরনও বদলে যেতে থাকে। তখন থেকেই দ্বিপক্ষীয় সফর কমে যায়। আর তারপর থেকেই কূটনীতি শুরু হয় ভার্চ্যুয়ালি। দেশ-বিদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স আর টেলিফোনেই হয়েছে এ বছরের কূটনীতি।
করোনাকালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েন। সে কারণে এসব দেশের অনেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন টেলিফোনে আলাপ করেছেন। করোনাকালে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে ড. মোমেনের তিন দফা টেলিফোনে আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা প্রাধান্য পায়। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন ড. মোমেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেরত না পাঠাতে অনুরোধ জানান তিনি। বছরের এপ্রিল মাসে ওআইসির অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। সেই কনফারেন্সে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোভিড রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি ফান্ড গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ১১ জন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। সেই বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা নিরসনে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসব দেশের মধ্যে ছিল কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, জর্ডান, লেবানন, কুয়েত, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, ওমান ও বাহরাইন।
চলতি বছর ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-সিভিএফ এর সভাপতির দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ। আর অক্টোবর মাসে এই ফোরামের ভার্চ্যুয়াল কনফারেন্সে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বছরের মার্চে সার্ক শীর্ষ নেতাদের ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরে সার্ক কাউন্সিলর বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে ৩৯ দফা যৌথ বিবৃতি ঘোষণা দেওয়া হয়।
করোনাকালে বিদেশে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা, একইসঙ্গে বাংলাদেশে আটকে পড়া বিদেশি নাগরিকদের পাঠাতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। একইসঙ্গে করোনাকালে বেশ কয়েকটি দেশে খাদ্য ও ওষুধসামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
করোনাকালে কূটনীতি ভার্চ্যুয়াল হলেও এরই মধ্যে ঢাকা সফর করেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসুগ্লু, হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী পিটার সিজার্তো এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। আর সেপ্টেম্বর মাসে আঙ্কারায় বাংলাদেশ মিশনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করতে তুরস্ক সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। সে কারণে বলা যায়, ভার্চ্যুয়াল কূটনীতির পাশাপাশি শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে কূটনীতিতেও সক্রিয় ছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২১
টিআর/এইচএডি