ঢাকা: নারী আন্দোলনের বাতিঘর তথা আইকন ছিলেন আয়শা খানম। নারী আন্দোলনের মাধ্যমে মানবমুক্তির পথ দেখিয়েছেন।
শনিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় অনলাইনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রয়াত সাবেক সভাপতি আয়শা খানমের স্মরণ সভায় বক্তারা একথা বলেন।
স্মরণ সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, আয়েশা খানম যে আদর্শ রেখে গেছেন, তার এই আদর্শ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজে যদি এই আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে এই যে বিধ্বস্ত সমাজ, এই অবস্থা থেকে জাতিকে উত্তরণ করা যাবে।
তিনি বলেন, আজ সমাজ বিধ্বস্ত অবস্থায়, সমাজ যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে উন্নয়ন কোনো কাজে আসে না। আমেরিকা সবচেয়ে বড় উন্নয়নের দেশ। কিন্তু সেখানে আজ আমরা কী দেখলাম। শুধু উন্নয়ন হলে হয় না, সবচেয়ে বড় উন্নয়ন মানবকল্যাণে কাজ করা। অনেক উন্নয়ন হচ্ছে দেশে, এখন যদি সামাজিক উন্নয়ন না করতে পারি, তাহলে এ উন্নয়ন অর্থবহ নয়।
ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, নারী আন্দোলনই পারে এ সমাজকে শান্তি ও সুবিচারের পথে নিয়ে আসতে। বিশেষ করে ধর্ষণ, এটা সমাজের ধ্বংসের জায়গা। সমাজকে অনাচার ব্যভিচার থেকে মুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এখানে নেতৃত্ব দেবে আয়শা খানমের উত্তরসূরী নারীরা।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আয়েশা খানমের বেশ অবদান রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যে আন্দোলন হয়েছে, সেখানে জাতিকে সংগঠিত করতে তার বড় ভুমিকা রয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করে গেছেন। মৌলবাদী চক্রের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এখনো নারী নীতি ও শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা যায়নি। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করা যায়নি। এটা একটা অসঙ্গতি। ফলে মৌলবাদীরা আস্ফালন করছে। নারীর প্রতি নির্যাতনের সবচেয়ে বড় কারণ ওয়াজ। এই ওয়াজে ৫০ শতাংশ ওয়াজ নারীর প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হয়। ফলে বর্তমানে যে ধর্ষণ হচ্ছে, সেটা ওয়াজে নারীর প্রতি ঘৃণার ফসল।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেমের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক, দীপ্ত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান, সাংবাদিক-কলামিস্ট সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. সালমা আলী, ডাকসুর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব জামান, রাজনীতিবিদ শামসুদ্দোহা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস, কেন্দ্রীয় সদস্য রাশেদা খানম রীনা ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।
শুরুতে প্রয়াত সভাপতি আয়শা খানমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। শ্রদ্ধা জানিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অদিতি মহসিন। প্রয়াত সভাপতি আয়শা খানমের জীবন ও কর্ম নিয়ে জীবন বৃত্তান্ত উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। আয়শা খানমের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্মরণ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২১
টিএম/এমএমএস