ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রাজ্যুয়েশনের পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরলো বাংলাদেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২১
গ্রাজ্যুয়েশনের পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরলো বাংলাদেশ

ঢাকা: স্বল্পোন্নত দেশ থেকে গ্রাজ্যুয়েশন সম্পর্কিত এক্সপার্ট গ্রুপ সভায় গ্রাজ্যুয়েশনের পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে উত্তরণ প্রক্রিয়া মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে পরবর্তীসময়ে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা আরও বেশি সময় অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

আসন্ন ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) ভার্চুয়্যাল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এক্সপার্ট গ্রুপ সভার এক বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএন-সিডিপির কাছে এ আহ্বান জানায় বাংলাদেশ।
 
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় একথা জানায়।

বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ।

বৈঠকে একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে সম্প্রতিক সময়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পক্ষে বাংলাদেশের সবশেষ অবস্থান তুলে ধরেন ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় আশা প্রকাশ করা হয় যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সব মানদণ্ড পূরণ করবে। একইসঙ্গে উক্ত উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে ২০২১ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদী প্রস্তুতিকালীন সময় দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশ গত ২০১৮ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত সিডিপির সবশেষ ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছিল। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দু’টি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করে।

সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী উত্তরণের সুপারিশ লাভের পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে। আগামী মাসে ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় উত্তরণের সুপারিশ লাভের পর পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশের গ্রাজ্যুয়েশন ২০২৬ সালে কার্যকর হবে।

প্রস্তুতিকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।    

বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপনকালে ইআরডি সচিব বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হতে চলেছে যখন সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে।

তিনি তার উপস্থাপনায় সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে অভূতপূর্ব সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে তার উপর আলোচনা করেন। একইসঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য যেসব সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে তা কাজে লাগানোর জন্য সরকার সব পক্ষকে নিয়ে কী কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে/গ্রহণ করবে তাও তিনি তার উপস্থাপনায় তুলে ধরেন।

ইআরডি সচিব উত্তরণ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে উন্নয়ন অর্থায়নের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আহ্বান জানান।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, জেনেভায় বাংলাদেশের জাতিসংঘ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ইআরডির যুগ্ম-সচিব ও সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্রাজ্যুয়েশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিডিপির সভাপতি হোসে আন্তনিও অকাম্পোসহ সিডিপির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন গতিধারার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। এই  সূচকগুলো হচ্ছে (১) মাথাপিছু আয় বা Gross National Income Per Capita (২) মানবসম্পদ সূচক বা Human Assets Index (HAI)– যেটি পুষ্টি, স্বাস্থ্য, মৃত্যুহার, স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষার হারের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় এবং (৩) অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক বা Economic Vulnerability Index (EVI) যেটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আঘাত, জনসংখ্যা এবং বিশ্ববাজার থেকে একটি দেশের দূরত্বসহ আটটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে কিছু নির্ণায়কের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশ বা Least Developed Countries (LDC) হিসেবে আলাদাভাবে শ্রেণিবদ্ধ করে। ১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ছিল ২৫ যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬-এ। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এ পর্যন্ত মোট ৬টি দেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে সমর্থ হয়েছে। এই দেশগুলো হলো- বোতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু।    

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২০
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।