ঢাকা: বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমানের হাত ধরেই দেশে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিস্তার ঘটে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে ৫০০ স্পটে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানের বেকারিতে নারকীয় হামলার চালায় জঙ্গি সদস্যরা। এরপর থেকে পাল্টে যায় দেশের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সব হিসেব নিকেশ। বিগত বছরগুলোতে দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করে জনমানুষ। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দেশ ও সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ নিজেদের অবস্থান আরও কঠোরভাবে প্রকাশ করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের মধ্যদিয়ে দেশে নিষিদ্ধ এসব জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের সক্ষমতা হারাতে শুরু করে। এসব অভিযানের মাধ্যমে শতাধিক জঙ্গি নিহত হন এবং গ্রেফতার হয়েছে হাজারো জঙ্গি সদস্য।
গ্রেফতারের কিছুদিন পর তবে আইনের ফাঁক গলে জঙ্গি সদস্যরা জামিনে বেরিয়ে আবারও জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গিবাদে। কারণ অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন করা গেলেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে জঙ্গি সদস্যদের মতাদর্শের পরিবর্তন ঘটে না, বরং প্রখর হয়। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপের এখনও কোনো ভিত্তি পায়নি। তাই জঙ্গি সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নতুন এক দিগন্তের উন্মোচন হতে চলেছে। ভুল পথে যাওয়া নয় জঙ্গি সদস্যকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব বলছে, জঙ্গি সংগঠনগুলোর সক্ষমতা হারানোর কারণে অনেকেই তাদের ভুল বুঝতে পারছে। আর এ কারণেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়া অনেকেই পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইছেন। ইতোমধ্যে অনেক সদস্যই যোগাযোগ করছেন। যাবা জঙ্গি মতাদর্শ থেকে বেড়িয়ে সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান তাদের জন্য ডিরেজিক্যালাইজেশন বা বিজঙ্গিবাদকরণ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের কর্ম ও রুটি-রুজির বিষয়ে সহযোগিতাসহ প্রকৃতভাবে ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে এ প্রোগ্রামে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ভুল পথে যাওয়া নয় জন জঙ্গি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসছেন নবদিগন্তের পথে। জানা গেছে, এদের মধ্যে দুইজন নারী, ও সাত জন পুরুষ। এদের মধ্যে চিকিৎসক দম্পতি, প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। রয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত স্বল্প শিক্ষিতরা। তার রেডিক্যালাইজড হয়ে কেউ জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তবে এবার পালা বদলে চাইছেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে।
এবিষয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ‘জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জঙ্গিবাদের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের যে সাফল্য তার অনেক কাছে অনুসরণীয় হয়েছে। বর্তমানে দেশে থেকে জঙ্গিবাদকে সরকার সমূলে উৎপাটন করতে চায়। এজন্য জঙ্গি সদস্যদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা এবং শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা একটি অংশ। আমরা অপারেশন বা অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের দমন করতে পারি। কিন্তু যদি সমূলে উৎপাটন করতে চাই, তবে তাদের মস্তিষ্ক ও হৃদয় থেকে এ জঙ্গিবাদ বের করে ফেরাতে হবে। ’
জঙ্গিবাদকে সমূলে উৎপাটন করতে আমরা তাদের ডি-রেডিক্যালাইজেশন বা বিজঙ্গিকরণ পন্থা অবলম্বন করছি জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞ এবং আমেরিকার বেশ কয়েকজন জজ (আইনজীবী) জঙ্গিবাদ নির্মূলে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ একটি সফল দেশ। সেজন্য আমরা জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি আমার বিজঙ্গিকরণ বা ডি-রেডিক্যালাইজড প্রোগ্রাম শুরু করেছি। জঙ্গিবাদবিরোধী সংগ্রাম আন্দোলন বা ক্যাম্পেইনের এটা একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন ঘটবে।
র্যাব জানায়, বেশ কিছু জঙ্গি সদস্যদের সঙ্গে বেশ কয়েক মাস ধরে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে জঙ্গি সদস্যদের বের করে আনার জন্য সুশিক্ষিত আলেম, সাইকোলোজিস্ট (মনোবিজ্ঞানী) সাইক্রেটিস, কাউন্সিলর ও আমাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মোটিভেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস