যশোর: পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্ত হয়ে ফিরলেও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপুকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
যশোর হাসপাতালে ভর্তির পর বুধবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।
বিপুর অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাকে নির্মমভাবে প্রহর করা হয়। তিনদফা তাকে পেটানো হয়।
এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে, পুলিশ সুপার দাবি করেছেন পুলিশ হেফাজতে কোনো মারপিটের ঘটনা ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার (১১ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে পুলিশলাইন্সে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদা পোশাকে পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এসময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন। সেসময় নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। এক পর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে প্রহার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
এসময় মাহমুদ হাসান বিপুসহ অভিযুক্তদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। সোমবার রাতভর আটকে রাখার পর আন্দোলন-বিক্ষোভের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে পুলিশ বিপুকে মুক্তি দেয়।
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপু জানান, সোমবার শহীদ মিনার এলাকায় সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্য নারী নিয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসেছিলেন। এসময় স্থানীয় কয়েকজন তাদের মারপিট করে। হট্টগোল দেখে পাশের শেখ আবু নাসের ক্লাব থেকে বিপু এগিয়ে যান। তিনি বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। তিনি মারপিটে জড়িত নন, কিন্তু পুলিশ তাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর তাকে আটকে রেখে রাতভর বেধড়ক মারপিট করে। তাকে হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে। তার সারা শরীরে কালশিটে পড়ে গেছে। দুই পা ফেটে গেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী এ নির্যাতন চালিয়েছেন। অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদার গ্রুপ করিস; শ্যুট করে দেবো!’
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানিয়েছেন, বিপুর সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে বেদম প্রহার করা হয়েছে। তার প্রেশার, ডায়াবেটিস রয়েছে। রক্তে প্লাটিলেট এক লাখের নিচে নেমে গেছে। চার সদস্যের মেডিক্যাল টিম তাকে পরীক্ষা করেছে। মেডিকেল টিম তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছে।
অন্যদিকে, বিপুকে আটকের পর ওই রাতেই পুলিশ শাহীন চাকলাদার সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাতজন নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেছেন, সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক, তার ছেলে পৌর কাউন্সিলর হাজী সুমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, জেলা যুবলীগের সদস্য মনজুর আলম, এমএম কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান এবং যুবলীগ কর্মী সোহাগের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এসময় এ বাড়িগুলোতে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালানো হয়।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, ওই ঘটনা কেন্দ্র করে পুলিশের একাধিক টিম গভীর রাতে তার বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপির প্রেসসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়, যা সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে।
তবে, যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটকে রেখে মারপিট করা হয়েছে। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে এবং অভিযুক্তদের আটক করে। আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ হাসান বিপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকালে শারীরিকভাবে আঘাতের কোনো বিধান নেই। মঙ্গলবার বিকেলে নেতাদের জিম্মায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্তির আগ পর্যন্ত নির্যাতনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এখন এ অভিযোগ করা হচ্ছে। যেহেতু অভিযোগ এসেছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
ইউজি/এফএম