ঢাকা: কোনো মাধ্যম ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা সরাসরি উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছে দিতে মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এখন থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ ও ‘বিকাশ’-এর মাধ্যমে সরাসরি উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছে যাবে। এতে উপকারভোগীদের আর ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে হবে না। তারা বাড়ির আশপাশের যেকোনো নগদ ও বিকাশ এজেন্ট থেকে ভাতার টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ মোবাইলে ভাতা পাঠানোর প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেই সমস্ত ভাতাগুলো দিচ্ছি এটা যেন যথাযথ সঠিকভাবে যে মানুষটাকে আমরা দেব তার হাতে পৌঁছায়। মাঝে যেন আর কেউ না থাকে। তাদের অর্থটা তাদের হাতে যাবে। তাদের যেভাবে খুশি তারা সেভাবে ব্যবহার করবে। সেটুকু যেন আমরা করতে পারি। সেটার ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেই ব্যবস্থাটা আপনারা নিয়েছেন।
মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যেদিন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়ে শপথ নেই সেদিনই বলেছিলাম আমি মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রীত্ব আর কিছু না প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে এটা যে আমি কাজ করার সুযোগটা পাচ্ছি। কাজ করার ক্ষমতাটা পাচ্ছি। কাজেই সেই মানুষের জন্য কাজ করবো, মানুষের সেবা করবো। আমার সরকার মানে মানুষের সেবক। সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। আর যে কারণে আমরা এ পদক্ষেপটা নেই।
আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস রেখে বারবার ভোট দিয়ে দেশের সেবা করার সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুর, পিরোজপুর, লালমনিরহাট ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে উপকারভোগীসহ জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
নেত্রকোনা প্রান্ত থেকে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা ভোগী একজন অন্ধ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের বিরাট কষ্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। আগে ব্যাংকে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে হতো। এখন মোবাইলে টাকা দেওয়ায় বাড়ি কাছ থেকে নিজের সুবিধা মতো টাকা তুলতে পারছি।
নেত্রকোনা থেকে আরেকজন বয়স্ক ভাতা ভোগী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আগে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে ভাতা আনতে হতো। মোবাইলে সহজে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা আমাদের অনেক উপকার হয়েছে, কষ্ট কমেছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ৪৯ লাখ বয়স্ক পুরুষ ও নারীকে বয়স্ক ভাতা, জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ২০ লাখ ৫০ হাজার নারীকে বিধবা ভাতা, জনপ্রতি মাসিক ৭৫০ হারে ১৮ লাখ ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া এক লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, পর্যায়ক্রমে সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে আমরা আর্থিক সহায়তার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এখন পর্যন্ত আমরা ১১২টি উপজেলায় শতভাগ বয়স্ক ও বিধবা ভাতার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য উপজেলায়ও শতভাগ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে।
বিআইসিসি প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু ও সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১, আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা
এমইউএম/আরবি