খুলনা: খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক সাহার ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি)। চরমপন্থীদের বোমা হামলায় ২০০৪ সালের এদিনে নিহত হন তিনি।
খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত নির্ভীক সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহার ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার ক্লাবের পক্ষ থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ সাংবাদিক স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ। ১০টা ৪৫ মিনিটে ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
একইভাবে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নও (কেইউজে) নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া মানিক সাহার পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সিপিবিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করবে।
২০০৪ সালের ১৪ জানুয়ারি খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের মহানগর ও জেলা কমিটির সম্মেলন থেকে প্রেসক্লাবে যান একজনের সঙ্গে দেখা করতে। কথা শেষ করে তিনি রিকশায় করে আহসান আহমেদ রোডের বাড়িতে যাবার সময় প্রেসক্লাবের অদূরে চরমপন্থীদের বোমা হামলায় নিহত হন।
রায় ঘোষণাকালে বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ এম এ রব হাওলাদার তার পর্যবেক্ষণে বলেন, তদন্তে দুর্বলতার পাশাপাশি যথাযথ সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। সাক্ষ্য যথাযথ না পাওয়ায় অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া গেল না।
এতে ১১ আসামির মধ্যে নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ হজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেওয়া হয়। হত্যা মামলায় এসব আসামিদের সাজা হলেও বিস্ফোরক মামলায় কোনো আসামিকে সাজা দেওয়া যায়নি। হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয় অতি দ্রুততার সঙ্গে ২০০৪ সালের ২০ জুন।
এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক কাজী আতাউর রহমান ও খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন। আসামি ছিলেন ১৩ জন।
একই আসামিদের অভিযুক্ত করে বিস্ফোরক মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় বেশ পরে ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান।
পরে হত্যা মামলাটির অধিকতর তদন্ত হয়। এ অধিকতর তদন্তে সম্পূরক চার্জশিট জমা পড়ে ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন পাল। তিনি আরও একজন আসামি যোগ করেন। মোট আসামি হয় ১৪ জন। বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই আসামিদের মধ্যে তিনজন কথিত ক্রসফায়ারে মারা যান। ১১ আসামি নিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
মানিক সাহার ছোট ভাই প্রদীপ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সালে হত্যা মামলায় নয়জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন খুলনার দ্রুত বিচারিক আদালত। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতাদের সাজা হয়নি। পারিবারিকভাবে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে। এছাড়া খুলনা প্রেসক্লাবের শহীদ সাংবাদিক স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।
২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হন সাংবাদিক মানিক সাহা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ ও নিউএজ পত্রিকার খুলনাস্থ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ইটিভি প্রতিনিধি ও বিবিসি বাংলার খণ্ডকালীন সংবাদদাতা ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত মানিক সাহা ছাত্রজীবন থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
এমআরএম/আরবি