সাভার (ঢাকা): রাজধানীর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন আশিকুর রহমান। প্রতিদিন সকালে সাভারের তালবাগ এলাকা থেকে কর্মস্থল মগবাজারে যেতে হয় তাকে।
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে সড়কে যানজট থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন তিনি। কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে গাবতলী থেকে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার হেঁটে বাসায় ফেরেন তিনি। আবার বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে হেমায়েতপুরের বলিয়াপুর থেকে হেঁটে গাবতলী যান তিনি। শুধু আশিকুর রহমানই নয়, বুধবার থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলরত হাজারও যাত্রী এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আর এই দুর্ভোগের কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে হেমায়েতপুরের ‘সালেহপুর সেতু’।
জানা যায়, বুধবার দুপুরে সেতুর সাভার থেকে ঢাকাগামী লেনের বাম পাশের অংশটি দেবে যায়। দেবে যাওয়ার ফলে সেতুতে কিছুটা ফাটল সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে ঢাকামুখী যানবাহনগুলোকে ব্রিজের ভালো অংশ সাভারমুখী লেন দিয়ে পারাপার করানোর ফলে ধীরে ধীরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এরপর থেকে দীর্ঘ যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য মানুষ হেঁটে যাচ্ছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঢাকাগামী লেনে বলিয়াপুর থেকে সালেহপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার ও আরিচাগামী লেনে গাবতলী থেকে সালেহপুর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
আশিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাজ শেষে বাসা সাভারের দিকে ওয়েলকাম পরিবহনের করে রওনা হয়েছিলেন। পথিমধ্যে টেকনিক্যাল মোড় থেকেই তিনি যানজট পান। দুই ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে রাত ৮টার দিকে গাবতলীতে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে সালেহপুর সেতু পার হয়ে বাসায় আসেন। অন্যদিকে সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে একই অবস্থা। হেঁটে বলিয়াপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত গিয়ে পরে বাস ধরে কর্মস্থলে পৌঁছান তিনি।
তিনি বলেন, বুধবার রাতে অফিস থেকে বাসায় যেতে ৫ ঘণ্টা দেরি হয়েছে। আরও অফিসে যেতে ৩ ঘণ্টার মতো দেরি হয়েছে। সেতুটি দ্রুত সংস্করণ করা উচিত। আমরা যারা চাকরি করি তাদের জন্য ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছাতে না পারলে বিপদে পড়তে হয়।
ধানমন্ডি থেকে আশুলিয়ায় যাবেন জামাল সরিফ। তিনি একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা। প্রতিদিন সকালে তিনি তার সহকর্মীদের সঙ্গে স্টাফ বাসে করে আশুলিয়ার কর্মস্থলে আসেন। জামাল সরিফ বাংলানিউজকে বলেন, হাঠাৎ করেই বুধবার থেকে যানজট, রাতে কোনোমতে বাসায় পৌঁছেছি। কিন্তু এখন অফিসে যেতে তো অনেক দেরি হচ্ছে। আল্লাহ ভালো জানেন কখন অফিসে পৌঁছাবো। রাস্তায় দেখি এক এক করে গাড়ি চলছে। চাকা ঘুরতেই চাচ্ছে না।
এদিকে যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল রাত থেকে যানজট কমাতে চেষ্টা করছি। কাল রাত ১০টার দিকে গাড়ির চাপ বেড়ে গিয়েছিলো। ভোর চারটার দিকে চাপ কমে আসে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যানবাহনের চাপ আবার বাড়লেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি স্বাভাবিক রাখতে।
সালেহপুর সেতুর বর্তমান অবস্থা ও কেন এমনটি হয়েছে? এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মারুফ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ব্রিজটি ১৯৭০ সালের দিকে নির্মিত হওয়ায় ব্রিজটির স্থায়ীত্বকাল এমনিতে কমে এসেছিল। গত ১২ জানুয়ারিতে প্রথমে ব্রিজটির গার্ডারে ফাটল দেখা দেওয়ার সংবাদ পাই। এরপর দ্রুত তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গতকাল থেকে ব্রিজটির ঢাকাগামী লেন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনা রোধে ওই লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিরসনে সড়ক ও জনপথের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
এনটি