বাগেরহাট: বাগেরহাটের শরণখোলায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেনের সমাধিস্থল বাঁধাই ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজার এলাকায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে সমাধিস্থল বাঁধাই কাজের উদ্বোধন করা হয়।
এদিকে, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরে হলেও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেনের সমাধিস্থল বাঁধাই ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় উপজেলা প্রশাসনকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। একইসঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের স্বজনরাও।
ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেনের ভাগ্নে শিক্ষক আ. খালেক হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, দেশের জন্য সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন শহীদ হয়েছেন। দীর্ঘদিন মামার স্বীকৃতি ও সমাধিস্থল সংরক্ষণের জন্য দাবি জানিয়েছি, কিন্তু হয়নি। তবে এবার দাবি পূরণে উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুব খুশি। ক্যাপ্টেন আনোয়ারের সমাধিস্থল সংরক্ষণ হলে নতুন প্রজন্ম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে পারবেন।
শরণখোলার ইউএনও সরদার মোস্তফা শাহিন বাংলানিউজকে বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল থাকবে না! এটা খুবই লজ্জার। গত বছর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেনের সমাধিস্থল অবহেলিত’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করে সমাধিস্থলটি সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তার অংশ হিসেবে ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের সমাধিস্থল বাঁধাই ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব কাজটি সম্পন্ন করা হবে।
১৯৪৪ সালে শরণখোলার বলেশ্বর নদী সংলগ্ন দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আনোয়ার হোসেন। আলেপ খান ও জুমিনা খাতুনের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আনোয়ার ছিলেন সবার ছোট। ১৯৬৬ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে করাচি আর্মিতে যোগদান করেন তিনি। সর্বশেষ পাকিস্তানের খানে ওয়ালা ক্যান্টনমেন্টে ক্যাপ্টেন পদে নিযুক্ত হন।
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ২৬ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। চাকরির মায়া ত্যাগ করে, জন্মভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে শরণখোলাবাসীকে সংগঠিত করে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সুন্দরবনে অবস্থান নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে লড়াই করেন। তার নেতৃত্বে একাধিক হামলায় অনেক পাকিস্তানি সেনা সদস্য নিহত হন। রাজাকাররা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকে তার সাহসী কার্যক্রম। তার ভাই হেমায়েত উদ্দিন খানও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তার সঙ্গে। অপর দুই ভাই শাফায়েত খান ও সায়েদ খান পাকিস্তান আর্মির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বন্দি ছিলেন পাকিস্তানে।
১৯৭১ সালের ১১ জুলাই তার সহযোগী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি শরণখোলা থানা ঘেরাও করেন। পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকাররা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে। বীর মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি চালায়। দু’পক্ষের গুলি বিনিময়ের সময় ক্যাপ্টেন আনোয়ার গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে শহীদ হন।
শহীদ ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেনের মরদেহ তার বীর সহযোদ্ধা শেখ সামসুর রহমান ও মনিরুজ্জামান বাবুল গোপনে নৌকায় করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। রাত ১২টার দিকে বলেশ্বর নদীর তীরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় বিবাহ করলেও কোনো সন্তান ছিল না শহীদ ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেনের। যার ফলে মৃত্যুর পরে তার স্ত্রীও চলে যান অন্যত্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
এসআরএস