সিলেট: বাঁশের শলা দিয়ে তৈরি পলো। মাছ ধরার আদি যন্ত্র এটি।
বিশেষ করে শীত মৌসুমে বিল বাদালে পলো দিয়ে মাছ ধরার ধুম পড়ে। জেলে ছাড়াও গ্রামের আপামর জনতা পলো বাওয়া উৎসবে সামিল হন।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) গ্রাম বাংলার আদি উৎসব পলো বাওয়া হয়ে গেলো সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি হাওরে বড়বিলে।
শখের পলো বাওয়ায় অংশ নেন গ্রামের ছেলে-বুড়ো সকলে। দুপুর ১২ থেকে ২ টা পর্যন্ত চলে পলো বাওয়া। পলোয় পলোয় উঠেছে মাছ জনে জনে। রুই, কাঁতলা, বোয়াল, মৃগেল, তেলাপিয়াসহ হরেক রকমের মাছ উঠেছে পলোতে। একাধিক মাছ ধরতে পারায় সবার মুখে হাসির ঝিলিক।
এদিন সিলেটের আদি উৎসব পলো বাওয়ায় উজ্জীবিত করে মানুষকে। দল বেধে লোকজন বিলের মাঝে পলো হাতে ঝাপিয়ে পড়েন। শুরু হয় মাঝ ধরার প্রতিযোগিতা। তা দেখার জন্যও ওই অঞ্চলে ভিড় করেন উৎসুক জনতা।
এ উৎসব যেনো ওই এলাকার খানদানি বললেন বৃদ্ধ ছফির আলী।
পলো হাতে বিলের মাছ ধরে মহা খুশি যুবক সুরমান আলী। তিনি বলেন, প্রতি বছর এভাবে পলো দিয়ে আমরা মাছ ধরি। এটা আমাদের কাছে একটা উৎসব।
পলো দিয়ে মাছ ধরার সময়টা মানুষের কাছে মিলন মেলা স্বরূপ বললেন স্থানীয় বাসিন্দা আসলাম উদ্দিন। তিনি বলেন, গ্রামীণ সংস্কৃতি বা পুরনো ঐতিহ্য কিছুটা হলেও ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তারা। এ উৎসবে যোগ দিতে ছেলে-বুড়োসহ প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তি ছুটে আসেন বড় বিলে। কারোও হাতে পলো, ছিটকি জাল, উড়াল জাল, লাঠি জাল, হাত জাল (ঠেলা জাল) দিয়ে পলো বাওয়া উৎসবে।
এলাকাবাসী জানান, পলো বাওয়ায় ধরা পড়া মাছের মধ্যে শৌল ও বোয়ালের পরিমাণই বেশি মিলে। অনেকেই আবার গজার মাছ ধরতে সক্ষম হন।
পলো বাওয়া উৎসবের আনন্দটা যুবক-বৃদ্ধের চেয়ে ছোট ছোট শিশুদের মাঝেই একটু বেশি আনন্দের। তারা তাদের বাবা-চাচা-দাদা-মামা-ভাইয়ের হাত ধরেই উৎসবে শরিক হতে এসেছেন।
পৌষ সংক্রান্তির পর পরই ছোট-বড় সবাই মিলে প্রায় দুই শত বছর ধরে এ পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেন বিশ্বনাথ ইউনিয়নের ১৪-১৫ গ্রামের শতশত মানুষ।
তবে এই পলো বাওয়া দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন সকাল থেকেই ছোট ছোট দল বেধে আসতে থাকেন বিলে।
সিলেটের বিশ্বনাথের বড়বিলে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রায় দুইশ’বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব সম্পন্ন হলো শনিবার। বছর ঘুরে আগামি শীতে এ উৎসব ফের আসবে জানান স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২১
এনইউ/এমএমএস