ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত সিরাজগঞ্জের জনজীবন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২১
শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত সিরাজগঞ্জের জনজীবন শীত নিবারণে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করছেন কয়েকজন। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: একদিকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা জনপদ, তার সঙ্গে বইছে মৃদ শৈত্যপ্রবাহ। সেইসঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা।

সব মিলিয়ে তীব্র শীতে কাঁপছে সিরাজগঞ্জ শহর। শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেটে খাওয়া, দুস্থ ও অসহায় মানুষের জীবন।  

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের কোথাও সূর্যের আলো দেখা যায়নি। কাজের সন্ধানে শ্রমজীবী মানুষজন বাইরে বের হলেও শীতের দাপটে নাকাল হয়ে পড়েছেন। শীতের তীব্রতায় শরীর জুবুথুবু। এ অবস্থায় কাজ করতে পারছেন না তারা।  

সকালে বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়ে ১০ ও ১৫ টাকার দুইটি ভাড়া মেরেছেন হবিবর রহমান (৫০)। এরপর শীতের তীব্রতায় রিকশায় আর পা রাখতে পারেননি তিনি।  জেলা শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করছিলেন কয়েকজন রিকশাচালক। এ সময় তাদের তাপ পোহাতে দেখে রিকশা দাঁড় করিয়ে সেখানেই বসে পড়েন হবিবুর রহমান।  

তার মতো অবস্থা আমিনুল ইসলাম, সোবাহান, ইসমাইল, সাইফুলসহ অনেক রিকশা চালকেরই। শীতের পোশাক গায়ে জড়িয়ে এলেও স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না তারা। তাই সবাই মিলে আশপাশ থেকে কাগজ কুড়িয়ে বসেছেন আগুন পোহাতে।  

এসব রিকশা চালকরা বাংলানিউজকে জানান, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝড়া কুয়াশা আর প্রচণ্ড শীতে হাত-পা জমে যাচ্ছে তাদের। যার কারণে রিকশা চালাতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। কিছুক্ষণ রিকশা চালানোর পরই শীতে হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করছেন সবাই।           

রিকশাচালক রমজান আলী বাংলানিউজকে বলেন, শীতে যতই কষ্ট হোক, রিকশাতো চালাইতেই হইবো। ঘরে বউ-ছওয়ালপাল (স্ত্রী-সন্তানরা) আছে। কাম (কাজ) কইর‌্যা (করে) বাজার না নিয়্যা (নিয়ে) গেলে সবাইকে না খাইয়া থাইকতে অইবো (হবে)। আবার জমার ট্যাহাও (টাকা) দিতে অইবো।  

 ছবি: বাংলানিউজ

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরাও এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়ে ভাড়া যোগাড় করতে পারছেন না। অনেকেই শীতের পোশাক গায়ে জড়িয়ে নিজ গাড়ির মধ্যে জুবুথুবু হয়ে বসে রয়েছেন।  

শীতের কারণে শহরে লোকজনের উপস্থিতি বেশ কম। ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসে থাকলেও দেখা মিলছে না গ্রাহকের।  

এম এ মতিন সড়কের ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, একই রোডের মাইদুল ইসলাম ও স্টেশনারী ব্যবসায়ী বাবু বাংলানিউজকে জানান, সকাল থেকেই দোকানে বসে আছেন তারা। কোনো গ্রাহকের দেখা নেই।  তীব্র শীত তো আছেই, তার ওপর খোলা দোকানে হিমেল বাতাস ঢুকে কাবু করে ফেলছে তাদের।  

তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত তিন দিন ধরে তাপমাত্রা কমছে। গত শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার (১৭ জানুয়ারি) ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সোমবার ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দু’দিনের তুলনায় সোমবার তাপমাত্র বাড়লেও কুয়াশার সঙ্গে হালকা বাতাস ও শিশির পড়ার কারণে শীতের তীব্রতা একটু বেশি।  

তিনি বলেন, আরও দু’দিন এমন অবস্থা থাকতে পারে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার (১৯ ও ২০ জানুয়ারি) বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।