ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে আফ্রিকার চারটি দেশে ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তবে আফ্রিকার দেশগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের মতো চাকরি পাওয়া যাবে না।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমির সম্মেলন কক্ষে “বাংলাদেশিদের বিদেশে চাকরির সুযোগ এবং চুক্তিতে চাষাবাদ” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার ফর ফরেন পলিসি অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার ‘মধ্যপ্রাচ্য’। এখানকার শ্রম বাজার সংকুচিত হতে পারে। আমাদের যে রেমিটেন্স আসছে, তখন এতে একটা অসুবিধা সৃষ্টি হবে। তাই গত সপ্তাহে আমরা একটি বৈঠক করেছি। সেখানে আলোচনা হয়েছে, আমরা যদি বিদেশে লোক পাঠাতে পারি, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স উপার্জন করতে পারব। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা একটি রোডম্যাপ চিহ্নিত করেছি।
আব্দুল মোমেন বলেন, সৌদি আরবে আমাদের যে রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তিনি কিছু বিষয় সম্প্রাসারণ করেছেন। তাকে তাগাদা দিয়েছি কিছু করার জন্য। তিনি বলেছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। আফ্রিকার চারটি দেশে এসব লোক পাঠানো যাবে। প্রতিবছর শ্রম বাজারে যুক্ত হয় প্রায় ২০ লাখ মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের মতো চাকরি পাওয়া যাবে না। আফ্রিকার দেশগুলোতে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি আফ্রিকায় গিয়েছিল। তারা কৃষি আবাদের সম্ভাবনা দেখার জন্য আফ্রিকার অনেকগুলো দেশ ঘুরে এসেছেন। পরে এগুলো আর আগায়নি। আমরা এখন বিদেশে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করছি। আমরা দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছি। বিনিয়োগ আনার জন্য আমাদের সব দূতাবাস চেষ্টা চালাচ্ছে। একইভাবে লাভজনক কর্মসংস্থান তৈরির জন্য সুযোগ খুঁজছি। আফ্রিকা এমন একটি দেশ মনে হচ্ছে সেখানে (খুব সহজ না, কারণ আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে ওখানে) কৃষি শ্রমিক নিয়ে গিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের লোকেরা খুব স্মার্ট। একবার একজন কোথাও গেলে, সেখানে অনেকে যায়। আমরা চেষ্টা করছি, কীভাবে সুযোগটা তৈরি করতে পারি। এটা করা গেলে, আমাদের উপকার হবে। এজন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করছি। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী যদি আফ্রিকায় গিয়ে বলেন, চাকরি দেন, তারা শুনবে না। যদি আমরা বলি, তোমাদের দেশে বিনিয়োগ করবো, তোমার দেশে খাদ্যের অভাব, মাছের অভাব, আমরা এগুলো পূরণ করবো, তাহলে কিন্তু খুব খুশি হবে। তোমার কোনো পয়সা লাগবে না, শুধু জমি দিবা, মাঠ দিবা। তাহলে কিন্তু খুশি হবে। তখন তারা এটি গ্রহণ করবে। আমাদের প্রতিবেশী, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেকগুলো দেশ এরই মধ্যে আফ্রিকায় এসব করেছে।
বৈঠকটি অনেককে নিয়ে করেছি। আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সচিবের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি এটা কোঅর্ডিনেট করবেন। আন্তঃমন্ত্রণালয় কাজ করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। মুজিববর্ষে যদি আমরা শুধু করতে পারি। উই উইল বি মোস্ট হ্যাপি। এটি একটি প্রচেষ্টা, আমরা যেহেতু সবাই এ ব্যাপারে একমত। আমার মনে রোড ইজ নট টু বি ডিফিকাল্ট। বাট ইট ইজ নট ইজি আইদার অর সো উইল অন টুগেদার এ ব্যাপারে, যোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি সুদানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। অনেক সময় আমাদের টাকাও লাগবে না। কারণ সৌদি আরবের কয়েকটা তহবিল আছে। তারাও কৃষিখাতে বিনিয়োগ করতে চায়। তারা কিন্তু আমাদের সাহায্য করতে পারে। কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, সেখানে হাজার খানেক একর জমি তারা দেবে। এগুলো আমরা প্রস্তাব পেয়েছি।
এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
এসই/এআই