সিলেট: সিলেটে প্রথম ধাপে ১৯টি কার্টনে পৌঁছালো ২২ হাজার ৮০০ করোনা ভ্যাকসিন। রোববার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে ভ্যাকসিনের চালানটি একটি রেফ্রিজারেটর সম্বলিত গাড়িতে পুলিশি পাহারায় করে সিলেটে পৌঁছায়।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল ভ্যাকসিনের চালানটি গ্রহণ করেন এবং নিজ কার্যালয়ে সম্প্রসারিত টিকা দান অন প্রোগ্রাম (ইপিআই) টিকা রাখার ভবনে সংরক্ষণ করেন। সেখানে সংরক্ষণাগারে ২২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ফ্রিজে টিকা রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ১৯টি কার্টনে এক হাজার ২০০টি করে ভ্যকসিন রয়েছে। সে হিসেবে প্রথম ধাপে সিলেটে ২২ হাজার ৮০০ কোভিড ভ্যাকসিন এসেছে। দ্বিতীয় চালান আগামী মাসে আসবে ধারণা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি। ভ্যাকসিন প্রয়োগে যে কলাকৌশল দরকার, সেই কলাকৌশলের নিয়ম জানতে ঢাকায় গিয়ে দুই জন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। যারা কলাকৌশলী তাদের ৭২ জনকে রোববার দুইটি ভেন্যুতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তারা গিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যারা স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্চাসেবীদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
সিভিল সার্জন বলেন, টিকাদানের জন্য মহানগর এলাকায় সিটি করপোরেশনের অধীনে ২৫টি কেন্দ্রসহ সিলেটের জেলা ও উপজেলায় ১৫৩ কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে দুই স্বাস্থ্যকর্মী ও চার স্বেচ্ছাসেবীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ৪ ফেব্রুয়ারি।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, করোনার টিকাদানের জন্য ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে চারটি, সদর হাসপাতালে আটটি এবং পুলিশ লাইন হাসপাতালে কেন্দ্র করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে ১৩টি টিম কাজ করবে। পাশাপাশি আরও ১০টি টিম টিকাদানের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে। টিকাদান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রতিটি হাসপাতালে একটি করে মেডিক্যাল টিম থাকবে।
প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৮০০ ভ্যাকসিন আসলেও পর্যায়ক্রমে ১০ লাখের বেশি ভ্যাকসিন পাবে সিলেট বিভাগ। আর টিকাদান কার্যক্রমের সুষ্টুভাবে সম্পন্নে সিলেটে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে জেলা ও মহানগর এলাকার জন্য পৃথক দুইটি কমিটিও করা হয়েছে। নগর এলাকায় ২২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক সিলেট করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং সদস্য সচিব প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক।
জেলা পর্যায়ে আট সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক এম কাজি এমদাদুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিকভাবে আসা ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন ফ্রান্টলাইনার যোদ্ধাসহ ১৫ ক্যাটাগরিতে। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় জড়িত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, সরকারি সচিবালয়ে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম কর্মী, পৌর-সিটি করপোরেশনের সম্মুখ সারির কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস’র কর্মকর্তা-কর্মচারী, কবর খনন ও মৃত ব্যক্তির সৎকারকারীরা এর আওতায় রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন পরিকল্পনায় দেখা গেছে, সিলেট বিভাগে ১০ লাখ ৩২ হাজার এক জনকে টিকা দেওয়া হবে। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৫ জনকে, চট্রগ্রাম বিভাগে ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ জনকে, রাজশাহী বিভাগে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ জনকে, রংপুর বিভাগে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯ জনকে, খুলনায় ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৬ জনকে এবং বরিশাল বিভাগে আট লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৪ জন টিকা পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১ , ২০২১
এনইউ/কেএআর