ঢাকা: ঢাকার সাভারের আমিনবাজার এলাকায় পুলিশ পরিচয় স্বর্ণ ডাকাতির একটি মামলায় আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গ্রেফতার ডাকাতচক্রের আট সদস্যের মধ্যে পুরান ঢাকার তাঁতী বাজারের একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী, একজন কারিগর ও একজন বহিষ্কৃত সাবেক সেনা সদস্যও রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১২ নস্বর সেক্টরের অবস্থিত পিবিআইয়ের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
গ্রেফতার ডাকাতচক্রের সদস্যরা হলেন— মানিকগঞ্জের সুরেশ চন্দ্র হালদার (৪৮), কেরানীগঞ্জের মিঠুন মজুমদার (৩৩), উজ্জ্বল চন্দ্র (৩২), মুন্সিগঞ্জের মিহির দাস (৩২), শংকর চন্দ্র ঘোষ (৪৫), পল্লবীর সোহেল আহমেদ পল্লব (৪৫), বহিষ্কৃত সাবেক সেনা সদস্য ফারুক হোসেন (৪০) ও মাদারীপুরের মিঠুন চৌকিদার (৩০)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতি হওয়া ২২ ভরি স্বর্ণ, স্বর্ণ বিক্রির পাঁচ লাখ টাকা, লুণ্ঠিত একটি মোবাইল ফোন এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘গ্রেফতার আসামিরা আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের সদস্য। তারা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ডাকাতি করতেন। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও সদস্যের নাম আমরা পেয়েছি। তাদের মধ্যে আরও একজন সাবেক সেনা সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বাকি সদস্যদের নাম প্রকাশ করছি না। ’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদারের কাছ থেকে স্বর্ণ ডাকাতি করেন গ্রেফতার আসামিরা। সেদিন ভুক্তভোগী অর্জুন হালদার তার দোকানের কারিগর সুরেশ হালদারকে সঙ্গে নিয়ে রাজবাড়ি জেলার পলাশ জুয়েলার্স ও রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্সের মালিকদের অর্ডার দেওয়া স্বর্ণ সরবরাহের জন্য রওয়ানা হয়। তিনি একটি কালো ট্রলি ব্যাগের মধ্যে ১৬৬ দশমিক ৫৫৩ ভরি স্বর্ণ (চেইন, কানের দুল, বল চেইন, কানপাশা) ছিল, যার বাজার মূল্য ১ কোটি ১৪ লাখ ৯২ হাজার ১৫৭ টাকা।
তিনি বলেন, তাঁতী বাজার বাসা থেকে বের হয়ে রাজবাড়ীর যাওয়ার জন্য সাভার পরিবহনে ওঠেন। তারা গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে আবার বাস পরিবর্তন করে রাজবাড়ী পরিবহনে ওঠেন। ওই বাসটি সাভারের আমিনবাজারের বৈদ্যুতিক পাওয়ার প্ল্যান্টের কাছে এলেই চারটি মোটরসাইকেলে ১০/১২ জন মাস্ক পড়া লোক সেটি থামায় এবং ভেতরে উঠে পুলিশ পরিচয় দিয়ে অর্জুন হালদার ও সুরেশ হালদারকে টেনা হিঁচড়ে মোটরসাইকেলে তুলে গাবতলীর দিকে রওয়ানা হয়। এরপর ফাঁকা জায়গায় গিয়ে স্বর্ণের ব্যাগটি ছিনিয়ে দু’জনকে কিল-ঘুষি দিয়ে রক্তাক্ত করে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এরপর হতভম্ব হয়ে যায় ভুক্তভোগী অর্জুন হালদার। পরে ১৮ নভেম্বর আদালতে একটি ডাকাতির মামলা দায়ের করে তিনি। ওই মামলার তদন্তভার আদালত থেকে পিবিআই ঢাকা জেলার উপর ন্যস্ত করেন। ’
‘এসপি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, তদন্তে নেমে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গত ১৪ জানুয়ারি ডাকাতচক্রের চারজনকে (সুরেশ, মিঠুন, উজ্জল ও মিহির) গ্রেফতার করে পিবিআই। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবারও অভিযান চালিয়ে শনিবার (৩০ জানুয়ারি) চক্রের আরও চার সদস্যকে (সোহেল আহমেদ পল্লব, সাবেক সেনা সদস্য ফারুক হোসেন, শংকর চন্দ্র পাল ও মিঠুন) গ্রেফতার করা হয়। ’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার আটজনের মধ্যে ফারুক হোসেন নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক সাবেক সদস্য রয়েছে। তিনি করপোরাল হিসেবে বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তিনি জাতিসংঘের একটি মিশনে অংশ নিয়েছিলেন। এ চক্রের গ্রেফতার আরেক সদস্য অপারেশনাল কাজে অংশ নেওয়া সোহেল আহমেদ পল্লব, ২০১৮ সাল থেকে ডাকাতির কাজে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন। তার নেতৃত্বে চক্রটি এখন পর্যন্ত ৫-৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। ’
‘চক্রটি ধরতে অনেককেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আরও এক সাবেক সেনা সদস্যের এ ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই, তিনিও নজরদারিতে রয়েছেন। এছাড়া, সাবেক পুলিশ সদস্য জড়িত রয়েছেন বলেও জানা গেছে। ’
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার চক্রটি আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্য। এ চক্রে আরও প্রায় ১৫ জন সদস্য রয়েছেন। চক্রটি বিশেষ করে তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে বিভিন্নভাবে ডাকাতি করে আসছিলেন। ’
‘চক্রটি তিন ধাপে ডাকাতির কাজ করতেন। প্রথমত, তথ্য সংগ্রহ, পরে টার্গেট ব্যক্তির সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া, তারপর সেসব লুণ্ঠিত মালামাল বাজারে বিক্রি করা। গ্রেফতার হওয়া আট সদস্যের এ তিন ধাপে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বহিষ্কৃত সাবেক সেনা সদস্য ফারুক হোসেন, মিঠুন চক্রবর্তী ও সুরেশ হালদার ডাকাতির কাজে তথ্য সংগ্রহ করত। অপারেশনাল দায়িত্বে ছিল সোহেল আহমেদ পল্লব, সহযোগী হিসেবে ছিল মিঠুন, উজ্জ্বল, মিহির, লুণ্ঠিত চোরাই স্বর্ণ কিনতেন তাঁতীবাজারের আরেক ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র ঘোষ। ’
ঘটনার পর ভুক্তভোগী থানায় কেন মামলা করেননি— এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘এ ঘটনার পর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন অর্জুন হালদার। পরে তিনি আদালতে সিআর মামলা করেন, যার তদন্তভার পায় পিবিআই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২১
এসজেএ/এফএম