ঢাকা: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি দখলমুক্ত করে দ্রুত সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে অনুষ্ঠিত মিরপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনার থেকে এ দাবি করা হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল আহমেদ মজুমদার।
আলোচনায় অংশ নিয়েছেন মিরপুর রণাঙ্গনের অন্যতম অধিনায়ক মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম, নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১ এর সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হারুণ হাবীব, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, ‘মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গন মিরপুর: জহির রায়হান অন্তর্ধান রহস্যভেদ’ গ্রন্থের লেখক সাংবাদিক জুলফিকার আলি মাণিক, মিরপুরে শহীদ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কথাশিল্পী জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান, মিরপুরে শহীদ সাংবাদিক আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল আহসান, আমরা নতুন প্রজন্মের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম কির, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
যুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মিরপুর মুক্ত দিবস পালন করে। করোনা মহামারির কারণে এ বছর মিরপুরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য জনসমাবেশ ও র্যালির পরিবর্তে ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, যেহেতু মিরপুর একটি বিহারী এলাকা ছিল- এখানে প্রধানত বিহারীরা বসবাস করত। এরা বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার করত, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসরদের আশ্রয় দিত। বিহারীদের অত্যাচারে অনেক বাঙালি বাড়িঘর ছেড়ে চলে যায়। অনেককে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর আলবদর বাহিনীর অনেক সদস্য এখানে আত্মগোপন করেছিল। এরাই বুদ্দিজীবীদের ধরে এনে এখানে এবং অন্যত্র নিমর্মভাবে হত্যা করেছিল। প্রকৃতপক্ষে সমগ্র মিরপুরকেই তারা জল্লাদখানায় পরিণত করেছিল।
তিনি আরও বলেন, মিরপুরে অনেক বছর পরেও বাড়িঘর, মসজিদ নির্মাণ করতে গিয়ে শহীদের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। মিরপুরকে এক খণ্ড পাকিস্তানে পরিণত করে রেখেছিল ঘাতকরা। এখনও মিরপুরকে অনেকে মিনি পাকিস্তান বলে। এ অপবাদ আমাদের ঘোচাতে হবে। মিরপুরের নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ নগর’ বা এ ধরনের কিছু আমরা করতে পারি কিনা, সেটি ভেবে দেখতে হবে।
'বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৩১ জানুয়ারি ১৪০ জন সেনা সদস্য এবং তিন শতাধিক পুলিশ বাহিনীর সদস্য মিরপুর এসে মিরপুর মুক্ত করার যুদ্ধে লিপ্ত হন। শতাধিক সেনা সদস্য এবং পুলিশ সদস্য মিরপুরে যুদ্ধে শহীদ হন। বরেণ্য বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানও এ যুদ্ধে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি অনেক বড় এবং মর্মান্তিক একটি যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ইতিহাস বিশেষভাবে সংরক্ষিত হওয়া দরকার, আমাদের পাঠ্যপুস্তকেও অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকার। শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হওয়া দরকার। আমি মনে করি মিরপুরের নামটি পরিবর্তন করে 'মুক্তিযুদ্ধ নগর' করা যেতে পারে। '
এদিন সকাল ১০টায় জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে মিরপুরের শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি শুরু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২১
আরকেআর/আরবি