ঢাকা: মোহাম্মদপুরে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে যৌন সংসর্গে বাধ্য করার কোনো আলামত পায়নি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এই বিষয়ে কথা হয় হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজার সঙ্গে।
তিনি জানান, রোববার ছাত্রীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এছাড়া মদ্যপান, যৌন উত্তেজক অথবা অন্য কিছু খেয়েছিলো কিনা সব রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি শিক্ষার্থী ওই তরুণীসহ তার বন্ধুরা উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে মদ্যপান করেন। অতিরিক্ত মদ্যপানে তাদের মধ্যে এক তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে বাসায় চলে যান। পরে ভুক্তভোগী ওই তরুণীও অসুস্থ হয়ে পড়লে আরও দুই বন্ধু মিলে রাইডশেয়ারিং উবারের একটি গাড়িতে করে মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় যান।
ওই বাসায় যাওয়ার পর তরুণীর সঙ্গে তার বন্ধুর শারীরিক সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণী আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ভর্তি না করায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (৩১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
একই ঘটনায় আরাফাত নামে এক যুবক অসুস্থ হয়ে শনিবার (৩০ জানুয়ারি) মারা যান।
পুলিশ বলছে, মদের বোতলটি তাদের মধ্যে একজন বিমানবন্দর থেকে ওই রেস্তোরাঁয় নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকে ওই যুবক পলাতক রয়েছেন। তবে তার নাম-পরিচয় এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসেন। তরুণীর মৃত্যুর আগে তিনি বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রায়হান ও তার আরেক বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে অতিরিক্ত মদ্যপান বা মদ্যপানে বিষাক্ত কিছু থাকতে পারে। এছাড়া মদ্যপান করিয়ে বাসায় নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেটাও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করেছে কিনা খতিয়ে দেখছি। মদের বোতলটি যে এনেছিলো তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে সব রিপোর্টগুলো হাতে পাবো। বিস্তারিত তদন্ত সম্পন্ন হলে মৃত্যুর কারণ জানাতে পারবো।
এর আগে, গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানে একই ধরনের একটি ঘটনায় আনুশকা নূর আমিন নামের মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। জানা যায়, ওইদিন আনুশকা তার বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানেই তাকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। ওই ঘটনায় কলাবাগান থানায় আনুশকার বাবার দায়ের করা মামলায় আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে আদালতে দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন আসামি দিহান। বর্তমানে দিহান কারাগারে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২১
এজেডএস/কেএআর