ঢাকা: ‘পৃথিবীকে সাম্যের পৃথিবীতে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আমাদের শিখিয়েছে সাম্য প্রতিষ্ঠিত না করলে কেউ বেঁচে থাকতে পারবে না’।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বিশ্ব শব্দ করে পড়া দিবস-২০২১’ উপলক্ষে রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ আয়োজিত সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য ও সংগঠনটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এসব কথা বলেন।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমেরিকানরা পৃথিবীতে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। আমাদের থেকে ভালো অবস্থায়। তাদের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। পৃথিবীতে প্রায় ২২ লাখ মানুষ মারা গেছে। কোনো দেশ ভালো আছে? একদেশে ভাইরাস অ্যাটাক করলে, পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। অতএব সবাইকে নিয়েই ভালো থাকতে হবে। এই শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের সামনের দিনে এগিয়ে যেতে হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তবে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মাদরাসা, মসজিদে শব্দ করে পড়ানোর ঐতিহ্য ছিল এখনও আছে। আগে গ্রামের বাড়িগুলো থেকে শব্দ করে পড়ার অভ্যাস পাওয়া যেতো এখন পাওয়া যায় না। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় হারিয়ে গেলে ঐতিহ্যও হারিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এই ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা এই দিবস উদযাপন করছি। কিন্তু আমি বলবো, আমরা কি সচেতনভাবে বাংলা শেখার চেষ্টা করি কিংবা বাংলা উচ্চারণ শিখি যতটা সচেতনভাবে ইংরেজি ভাষা শেখার চেষ্টা করি। আর যেকোনো ভাষার উচ্চারণ শিখতে হলে শব্দ করে পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে আমরা যারা বাঙালি আছি তাদেরকেই শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ শিখতে শব্দ করে করতে হবে। তা নাহলে তো বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ হারিয়ে যাবে। এজন্য আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি বিশেষভাবে বাংলা ভাষা শেখার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাবির সাবেক উপাচার্য বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা নানা ভাষাভাষী হবে। নানা ভাষায় লেখাপড়া করবে। ইংরেজি, জার্মান যেকোনো ভাষা শিখবে আমাদের ছেলে-মেয়েরা। সব ভাষা শিখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাতৃভাষা। সেটা কি শিখছেন? বাংলা যখন বলতে যায়, দেখি তখন কত দুর্বলতা। কত অসহায় বাংলা বলতে পারছে না। এটা দুর্ভাগ্য। অতএব আমাদের দেশের শিক্ষা পদ্ধতিতে বাংলার প্রাধান্য আনতেই হবে। বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে আপনি ১০-২০টি ভাষা শেখেন।
তিনি আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ তিনি বাংলার পণ্ডিত। তিনি বাংলায় লিখেছি। বাংলায় শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৮ থেকে ২০ ভাষা জানতেন। তার বাংলা ভাষার পাণ্ডিত্যতে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি অন্য কোনো ভাষা। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর দেশের মানুষ হয়ে, আমরা কিভাবে বাংলা ভাষাকে অবহেলা করি? বাংলা মাধ্যমে যারা পড়ালেখা করেন অন্যদিকে যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করেন, শিশুবেলা থেকেই একটি বৈষম্য তৈরি হয়ে যায়। কেন আমরা এই বৈষম্য শিক্ষা মধ্যে আছি। বঙ্গবন্ধু এই শিক্ষা আমাদের বিয়ে জানি।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ অর্থনীতি যখন শূন্যের কোঠায় তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এই দেশের প্রাথমিক শিক্ষা হবে একমুখী। সর্বজনীন ও গণমুখী। এই একধার শিক্ষা শুধুমাত্র বাংলা ভাষার জন্য নয়। একধার শিক্ষা হচ্ছে শিশুদের মনে সাম্যের প্রতিষ্ঠা করা। আমরা সবাই এক সময়। সাম্যের মনোভাব সৃষ্টি হওয়া দরকার। পাঁচটি আঙুল এক সমান হবে না। শিশুদের মনে যদি সাম্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করা যায়। পরবর্তী জীবনে এটি বিশাল প্রভাব সমাজে পড়বে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র। সাম্য সবার মধ্যে সমান একটা অনুভূতি। সেসব জায়গা থেকে আমরা বহুদূরে সরে এসেছি। প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যে কোনো ধরনের বৈষম্য না এনে, বাংলা মাধ্যমিকে বাধ্যতামূলক করে, একইসঙ্গে বিদেশি ভাষা শেখার সুযোগ রেখে আমাদের ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার আছে।
রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা রূপক সিংহের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ অতিরিক্ত সচিব ড. ওমর ফারুক প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২১
এমএমআই/এএটি