সাভার (ঢাকা): বিকেল শেষে সন্ধ্যো যত গড়াচ্ছে মানুষের ভিড় ততোই বাড়ছে। হাতে মাটির কাপ নিয়ে দাড়িয়ে থেকে গল্পের ফাঁকে ফাঁকে চুমুক দিচ্ছেন ভিড় জমানো মানুষগুলো।
বলছিলাম সাভারের বিরুলিয়ার ২৬ বছর বয়সী মামুনের বাঙালি খানা রেস্টুরেন্টে তান্দুরি চাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া কথা। সোমবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পরেছে।
উতপ্ত মাটির কাপে পুড়ে যাওয়া চায়ের সুন্দর গন্ধ আকৃষ্ট করবে যে কাউকে। তাই তো ভিন দেশ কলকাতার এই চায়ের কদর বেড়েছে এখানে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই চা। দুর-দুরান্ত থেকে মানুষ এসে এক কাপ চা খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকতেও যেন দ্বিধা করে না।
সেখানে দেখা গেছে, সন্ধ্যা হচ্ছে আর মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। দল বেঁধে মানুষ চা খেতে আসছেন। চা খেয়ে আবার চলে যাচ্ছেন। চায়ের দোকানটি সড়কের পাশে হওয়ায় সড়কের ভেতরে দাঁড়িয়েই চা খাচ্ছেন অনেকে। তন্দুরি চা তৈরির কারিগরের দম ফেলানোর ফুরসত নেই। একের পর এক চা বানিয়েই চলছেন তিনি।
চায়ের মালিক মামুনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার বাড়ি বিরুলিয়া এলাকাতেই। তিনি প্রতিদিন যাতায়াতের সময় চিন্তা করতেন এখানে (ব্রিজের পাশে) একটি রেস্তোরাঁ দরকার। সে থেকে তিনি আড়াই মাস আগে রেস্টুরেন্ট খুলে তন্দুরি চা তৈরি শুরু করেন। তুরস্ক থেকে তন্দুরি চায়ের আবিষ্কার। তারপর ভারতের পুনেতে বেশি জনপ্রিয় হয় এই চা। সেই সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয় হয়েছে।
তন্দুরির তৈরিতে দুধের ভূমিকা অপরিহার্য। এছাড়া দুধ তৈরিতেই প্রয়োজন পরে আরও ১১টি আইটেম। তারপর গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী চাপাতি ব্যবহার করে তন্দুরির বিভিন্ন ধরণের চা তৈরি করা হয়। মালাই তন্দুরি চায়ে প্রয়োজন পরে আটটি আইটেম, চকলেট তন্দুরিতে নয়টি আইটেম ও খির তন্দুরিতে ১০টি আইটেম।
মামুন বাংলানিউজকে বলেন, আমি কলকাতার এক বন্ধুর কাছে শিখেছি। সে আমাকে রেসিপি গুলো দিয়েছে। সেখানে থেকে আমি মোটামুটি সব রেসিপি সংগ্রহ করা শুরু করেছি। প্রথমে যখন শুরু করি আমার বন্ধু আমাকে ভিডিও কলে সব বুঝিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে বেশিরভাগ অফিসিয়াল লোকজন আসে। এর মধ্যে শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ায় সেদিন সব চেয়ে বেশি মানুষের সমাগম হয়। তাছাড়া পাশেই গোলাপ গ্রাম। যারা গোলাপ গ্রামে ঘুরতে আসেন তারা একটুর জন্য হলেও এখানে বসে চা খেয়ে যান।
চায়ের দোকানের কর্মী আতিক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কাপ চা বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া যে কোনো দিবসে এর চেয়েও বেশি কাপ হয়। আমার রেস্টুরেন্টে ছয় জন কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে শুধু চা তৈরি করে তিনজন। তান্দুরি রেগুলার-২০ টাকা, তান্দুরি স্পেশাল-৪০ টাকা, তান্দুরি স্পেশাল মালাই-৫০ টাকা, তান্দুরি স্পেশাল চকলেট, স্বর মালাই, রস মালাই-৬০ টাকা।
মোহাম্মদপুর থেকে পরিবার নিয়ে গোলাপ গ্রাম দেখতে এসেছেন এরশাদ। ফিরতি পথে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চা খাচ্ছেন তিনি। তার সাথে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চা টা বেশ ভালো। গোলাপ দেখে ফেরার পথে পিচ্চি মেয়েটা বললো আব্বু চা খাবো। পরে নেমে সবাই মিলে চা খাচ্ছি। আগে অনেক শুনেছি এই চায়ের নাম।
শুধু বিরুলিয়ায় নয় তন্দুরি চায়ের দোকান এখন অনেক স্থানেই হয়েছে। যেমন পল্লিবিদুৎ, সাহীবাগ, সাভার সিটি সেন্টারেও। দোকানগুলোতে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে থাকে ভিড়।
সুস্বাদু এই চা খেতে চলে আসতে পারেন বিরুলিয়া, সাভার ও পল্লিবিদুৎ এলাকায়। বিরুলিয়ায় আসতে হলে মিরপুর থেকে আলিফ অথবা মোহনা পরিবহনে উঠে বিরুলিয়া ব্রিজে নামলেই হবে। পল্লিবিদুৎ এলাকায় আসতে হলে রাজধানী থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে সাভার হয়ে নবীনগর থেকে একটু সামনে আসলেই পাওয়া যাবে তান্দুরি চায়ের দোকান।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
কেএআর