ফেনী: ফেনীর ফুলগাজীর দরবারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ছয় নম্বর ওয়ার্ডের (জগতপুর) মেম্বার কামরুজ্জামান (কামরুল) নিজে পরিষদের সদস্যের দায়িত্বে থেকেও তার স্ত্রী সালমা তাহিনুর পাচ্ছেন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা।
শুধু এখানেই শেষ নয়- ছেলে নাভিদুল হাসানের পিতৃপরিচয় গোপন করে গ্রহণ করছেন প্রতিবন্ধী ভাতা।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারের ভাতাসেবা নিয়ে ইউনিয়নটিতে এভাবেই চলছে দুর্নীতি। স্থানীয় কৃষক লীগ নেতা মেম্বার কামরুজ্জামান জনপ্রতিনিধি হয়ে এভাবেই বঞ্চিত করছেন গ্রামের অসহায় মানুষদের।
অভিযোগ এসেছে, পরিবারের বাইরে যারা ভাতা সুবিধা ভোগ করছেন তারাও কামরুজ্জামানের পছন্দের। অর্থাৎ তার পছন্দের মানুষ হলেই মিলবে ভাতা কার্ড।
স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারুক আহমেদ মজুমদার অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডে এমন অনেকে আছেন ভাতা পাবার যোগ্য কিন্তু পাচ্ছেন না। এমনও অভিযোগ রয়েছে, এক বছরের টাকা দেওয়ার শর্তে কিছু লোককে বয়স্ক ভাতা কার্ড দিয়েছেন কামরুজ্জামান।
অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান জানান, ওয়ার্ডের সব প্রাপ্য ব্যক্তিকে ভাতা কার্ড দেওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের জন্য তা গ্রহণ করেছেন তিনি।
নিজের সন্তানকে প্রতিবন্ধী লিপিবদ্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২০১৮ সালের পূর্বে সে রিকশা থেকে পড়ে হাত ভেঙে ছিল তাই প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছে। তবে ছেলের পিতৃপরিচয় গোপনের কারণ জিজ্ঞাস করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
শ্যালিকা উম্মে কুলসুম ও উম্মে রুমানের স্বামী যথাক্রমে মো. কাইয়ুম এবং জিয়া উদ্দিন চৌধুরীকে জীবিত থেকেও মৃত দেখানো প্রসঙ্গে দুই বোন বলেন, ভাতা কীভাবে পাচ্ছেন তা জানেন না। তারা ভাতার আবেদন করেননি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হারুন মিয়া বাংলানিউজকে জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে সতেরো জনের একটি যাচাই ও বাছাই কমিটির মাধ্যমে ভাতা কার্ডের জন্য নাম চূড়ান্ত হয়। এতে ১২ জন ইউপি সদস্য ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) প্রতিনিধি, উপজেলা পরিষদের প্রতিনিধি, সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রতিনিধি এবং পরিষদের সচিব কমিটিতে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কমিটিতে সভাপতি হিসেবে থাকেন।
যাচাই ও বাছাই প্রসঙ্গে সমাজসেবা কর্মকর্তা হারুন বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পর প্রতিটি আবেদন উন্মুক্ত পর্যালোচনা করি। আমার পূর্বে কীভাবে এগুলো হয়েছে তা জানা নেই। উল্লেখ্য কার্ডগুলো ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে ইস্যু করা হয়েছে।
যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও দরবারপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মজুমদার এমন বিষয় তার জানা নেই বলে জানান।
যাচাই-বাছাই সভাপতির দায়িত্ব কতটুকু পালন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাজসেবা এ কাজটি করে থাকে।
কমিটির কাজ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম বলেন, মেম্বাররা নিজ নিজ ওয়ার্ড থেকে সম্ভাব্য উপকারভোগীর তালিকা দিয়ে থাকেন। সব-সময় তা যাচাই করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না।
কামরুজ্জামান এক সময় ফুলগাজী উপজেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও বর্তমানে তিনি দরবারপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম।
প্রয়াত চেয়ারম্যান একরামুল হকের গাড়িবহরে হামলায় দায়েরকৃত মামলার আসামি কামরুজ্জামান ২০১৫ সালে দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
দল পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে কামরুজ্জামান বলেন, রাজনীতির প্রয়োজনে দল পরিবর্তন করেছি।
সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট সাত হাজার ৭১৭ জন ভাতা সুবিধা ভোগ করছেন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন চার হাজার ২৩ জন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা পাচ্ছেন এক হাজার ৯৬০ জন এবং প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন এক হাজার ৭৩৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২১
এসএইচডি/আরআইএস