ঢাকা: স্কুলের গণ্ডি পার হতে না পারলেও প্রতারণার নানা কৌশলে বোকা বানিয়েছেন অসংখ্য মানুষকে। করোনা মহামারির মধ্যেও মানুষকে সহায়তার নামে প্রবাসীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রতারক।
আশরাফুল ইসলাম দিপু নামে এই মহাপ্রতারক নিজেকে কখনো গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক, কখনো দুদকের উপ-পরিচালক, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বড় ব্যবসায়ী আবার কখনো সুযোগ বুঝে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। বহুমুখী প্রতারণার মাধ্যমে মাত্র ২১ বছর বয়সেই বনে গেছেন কোটিপতি।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর পল্লবী থানার সেকশন-১১ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই প্রতারককে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
এসময় তার কাছ থেকে ৮টি মোবাইল, ১০টি সিম কার্ড, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের মাস্টার কার্ড একটি, একটি ব্যাংক এশিয়ার চেক বই, সরকারি গেজেটের প্রিন্টেড কপি, তিনটি ভুয়া ফেসবুক আইডি ও দু’টি ভিডিও জব্দ করা হয়।
এক গাড়ি চালকের স্ত্রীকে গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে তার প্রতারণার নানা গল্প।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা মহামারিতে অসহায়দের সাহায্য করার নামে ‘মানবিক টিম’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলেন দিপু। এই পেজের মাধ্যমে বিত্তবানদের কাছে অর্থ সহায়তা চান। যার মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
সরকারি বড় কর্মকর্তাসহ নানা পরিচয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তার ত্রাণও কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন দিপু। এর বাইরে স্কুলের কর্মচারী নিয়োগ, উপবৃত্তির টাকা পাইয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন নিয়োগের নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন।
পোশাকখাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান পরিচয়েও অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন দিপু। এছাড়া দিপু ফেসবুকে গুলশান ওয়েলফেয়ার ক্লাবের সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার তথ্যও প্রচার করে আসছিলেন।
পুলিশ জানায়, অষ্টম শ্রেণি পাস আশরাফুল ইসলাম দিপু নিজেকে স্নাতক পাস দাবি করতেন। প্রতারণার বিপুল অর্থে করেছেন বিলাসবহুল একাধিক বাড়ি। চড়তেন দামি গাড়িতে, যাতায়াত ছিল পাঁচতারকা হোটেলে। প্রতারণার জন্য দিপু ব্যবহার করতেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব। ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচারণাই ছিল তার প্রতারণার অন্যতম কৌশল।
দিপু প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত প্রায় ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তার দু’টি বিলাসবহুল বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। এর বাইরে আরো কোনো সম্পদ আছে কিনা খতিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আশরাফউল্লাহ বলেন, রাজধানীর ভাটারা থানায় দায়ের করা একটি মামলার তদন্তকালে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক আশরাফুল ইসলাম দিপুকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি একজন বড় মাপের প্রতারক। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে প্রতারণার জন্য দিপু বিভিন্ন সরকারি অফিস আদেশ, সরকারি গেজেট তৈরি করে সরবরাহ করতেন।
রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
***অষ্টম শ্রেণি পাস যুবকের লাখ লাখ টাকার প্রতারণা!
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
পিএম/এএ