ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গুড়ের জিলাপি বিক্রি করে স্বাবলম্বী মিরপুরের আবুল

জি এম মুজিবুর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১
গুড়ের জিলাপি বিক্রি করে স্বাবলম্বী মিরপুরের আবুল

ঢাকা: সৎ পথে থেকেও ছোটখাটো ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বর কলোনি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামেউল উলুম মাদরাসার সামনে ছোটো একটি দোকান নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে গুড়ের জিলাপি বানাতে শুরু করেন আবুল হোসেনের বাবা।

বাবাকে সহযোগিতা করার জন্য মাঝে মধ্যে দোকানে এসে বসতেন আবুল (৩৩) হঠাৎ একদিন আবুলের বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন, দোকানে এসে জিলাপি বানানো সম্ভব হয় না তার বাবার।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার আবুল হোসেনের বাড়ি, জন্ম রাজধানীর মিরপুরে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ভালো স্কুলে পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করবে। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে তার।
আবুল বাংলানিউজকে বলেন, ১০-১২ বছর আগে মাত্র ২০ হাজার টাকা লোন নিয়ে বাবা এই কাজ শুরু করেছিলেন। তখন আমি বাবাকে সহযোগিতা করতাম। একটা সময় বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর কাজ করতে পারেন না। তাই মাকে সহ বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আমি এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রতিদিন সকালে আমি বাজারে গিয়ে তেল, ময়দা, গুড় কিনে দুপুর দুইটা বা তিনটার পর থেকে জিলাপি বানানো শুরু করি আর রাত দশটা পর্যন্ত অবিরাম গতিতে চলতে থাকে। প্রতিদিন আমার চার/পাঁচ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। কর্মচারী ও অন্যান্য সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টাকা থাকে।

বাড়িতে আমার মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন এবং ঢাকাতে আমি আমার বউ বাচ্চা নিয়ে থাকি। ছোট ভাই বোন পড়াশোনা করে তাদের খরচ দিতে হয়, বাবা-মার চিকিৎসার খরচ তো আছেই। বাসা ভাড়া, দোকান ভাড়া, গ্রামে ও ঢাকা মিলে দুই সংসারের সব কিছুই এই ব্যবসার আয় দিয়ে চালাতে হয়। ছোট ভাইকে চার লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাঠিয়েছি। আমার বেশিরভাগ কাস্টমার পুলিশ সদস্য। আশেপাশে পুলিশ ব্যাটেলিয়ান, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসার সাবাই আমার দোকানের জিলাপি খায়।
কাস্টমার ধরে রাখার জন্য জিলাপির মান ভালো করার চেষ্টা করি। একা এত কাজ করতে পারি না তাই দুই/তিন জন কর্মচারী থাকে সব সময়। প্রতি সপ্তাহে প্রায় দেড়-দুই মণ জিলাপির অর্ডার থাকে। আমার থেকে কাজ শিখে আমার কর্মচারীরা আশেপাশে জিলাপির দোকান দিয়েছে, তারা সবাই তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছেন।
আমি তিন ধরণের জিলাপি তৈরি করি। রেশমি জিলাপি ২০০ টাকা, বোম্বাই জিলাপি ১৫০ টাকা ও মাঝারি গুড়ের জিলাপি ১৪০ টাকা করে কেজি বিক্রি করি।  

পরিশেষে আমি সবার উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চাই, আমরা যারা অল্প শিক্ষায় শিক্ষিত তারা বড় চাকরি বড় ব্যবসা না খুঁজে আমার মত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়ে জীবনটাকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা খুবই সহজ।
 

তার দোকানের একজন নিয়মিত কাস্টোমার রিজাউল করিমের কাছে জানতে চেয়েছি তার গুড়ের জিলাপির মান কেমন? 

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি পাশের মহল্লাতে অনেকদিন যাবত বসবাস করি। তার গুড়ের জিলাপি খেতে আসি এবং পরিবারের জন্য বাসায় নিয়ে যাই। কখনো কোন ধরণের খারাপ জিলাপি পাইনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১
জিএমএম/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।