ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে মৃত্যু: আটক ৪

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১
বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে মৃত্যু: আটক ৪

বগুড়া: বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তবে নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় বিষাক্ত মদপানে অন্তত ১৬ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া সদর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে চারজনকে আটকের খবর জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা।

আটকরা হলেন— পিএম (পারুল) হোমিও ল্যাবরেটরিজের মালিক নুরুন্নবী, শহরের গালাপট্টি মুন হোমিও হলের মালিক আব্দুল খালেক, হাসান হোমিও ফার্মেসির কর্মচারী মো. আবু জুয়েল ও করতোয়া হোমিও হলের মালিক মো. শহিদুল আলম সবুর।

তবে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলছেন, বগুড়ার এ ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিষাক্ত মদপানে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় অন্তত ১৬ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা ও স্বজনরা বলছেন, পুলিশের নিশ্চিত করা ব্যক্তিরা বাদে অন্যরাও বিষাক্ত মদপান করেছিলেন।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন— পুরান বগুড়ার দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা সুমন রবিদাস (৩৮), তার বাবা প্রেমনাথ রবিদাস (৭০), প্রেমনাথের ভাই রামনাথ রবিদাস (৬০), কাটনারপাড়ার হটুমিয়া লেন এলাকার সাজু প্রাং (৪৯), ফুলবাড়ি দক্ষিণ পাড়ার পলাশ মন্ডল (৩৫), পুলবাড়ি মধ্যপাড়া আব্দুল জলিল (৬৫), পুরান বগুড়ার সিজদারপাড়ার মো. রমজান আলী, বগুড়া সদরের ফাঁপোর ইউনিয়ন পরিষদের জুলফিকার আলী (৫৫)।

পুলিশ জানায়, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বিষাক্ত মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। এরপর ওই মদের বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশের তথ্যে পলাশ বিষাক্ত মদ খেয়ে নিহত হন। পলাশের ভাই পায়েল বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যালে ভর্তি। তারা পারুল ল্যাব নামে একটি দোকান থেকে রেকটিফাইড অ্যালকোহল কেনেন একজনের কাছ থেকে। গত শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় খাওয়ার পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

অসুস্থ পায়েলের স্ত্রী জানান, শনিবার তাদের পরিবারের একজনের জন্মদিন ছিল। এ কারণে তার স্বামী, দেবর ও দেবরের বন্ধু শখ করে মদ খান। সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালে নেওয়ার পর পলাশ মারা যান।

বিষাক্ত মদ খেয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন পলাশের ভাই আতিকুর রহমান পায়েল, পায়েলের বন্ধু আইয়ুব ও শিববাটি এলাকার হোটেল শ্রমিক রঞ্জু। এ ছাড়া শাজাহানপুর উপজেলার পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতালেই পলাশের ভাগনে বাঁধন জানান, জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যায় তার মামার সঙ্গে আব্দুর রহিম নামের আরেকজনও মদপান করেন। পরে তিনি তার বাড়ি ফুলবাড়ী দক্ষিণপাড়ায় যান। সেখানে রোববার মারা যান রহিম।

সবশেষ মৃতরা হলেন—বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার মেহেদি হাসান, আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল আহাদ এবং সারিয়াকান্দির লাজু মিয়া মঙ্গলবার মারা যান।

এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

তবে স্থানীয়রা জানান, মেহেদি হাসান, আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল আহাদ নিয়মিত নেশা করতেন। গত রোববার তারা উপজেলার ‘বি’ ব্লকের রায়হান হোমিও হল থেকে রেকটিফাইড অ্যালকোহল কিনেছিলেন।

এর আগে সোমবার রাতে মারা যান বগুড়ার কাটনারপাড়া এলাকার মোজাহার আলী, কাহালু উপজেলার উলট্ট মহল্লার আবু কালাম। আর বিষাক্ত মদ খেয়ে একই দিনে নিশিন্দারা ধমকপাড়ার আলমগীর মারা যান বলে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। যদিও পুলিশ বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের নিশ্চিত করা ব্যক্তি বাদে অন্যরা স্টোক করে মারা গেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার মারা যাওয়াদের মধ্যে সারিয়াকান্দির লাজু পেশায় রিকশাচালক। পাশাপাশি অ্যালকোহল বিক্রি করতেন তিনি। তার ভাই শফিকুলও মদপান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই লাজু ও শফিকুলের বুক জ্বলা-পোড়া করছিল বলে তারা চিৎকার করছিলেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে লাজুর মৃত্যু হয়। এর পর আত্মগোপন করেছেন তার ভাই শফিকুল। লাজুর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এ পর্যন্ত বিষাক্ত মদপান করে চারজনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষাক্ত মদপান করে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন আরও ছয়জন। তাদের বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করা কঠিন। তারা অবজারভেশনে রয়েছেন।

জেলা পুলিশের আটজন নিশ্চিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, মেডিক্যাল প্রতিবেদন ও আমাদের অনুসন্ধানে আটজন বিষাক্ত মদপানে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।


বগুড়ায় এই ১৬ জন রোববার (৩১ জানয়ারি) থেকে মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার মধ্যে মারা যান। এ ঘটনায় সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) করা মামলায় মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে চারজনকে আটক করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১
কেইউএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।