ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সেই শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের বেড়াজালে পুলিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১
সেই শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের বেড়াজালে পুলিশ

ঢাকা: রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি এখনও রহস্যের অন্তরালে। মৃত মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, তাদের মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ তদন্তে নেমে ঘটনা উদঘাটন করতে পারলেও মেয়েটির মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি। ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে? না কি মদপানে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে? তা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের বেড়াজাল।

এ ঘটনায় গ্রেফতার দুই আসামিকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। তবে, বাকি তিন আসামির মধ্যে আরাফাত নামের একজন মারা গেছেন, তাকে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু মদের পার্টিতে থাকা মৃত তরুণীর বান্ধবী নেহা ও তার বন্ধু অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের এখনও কোনো হদিস মেলেনি।

পুলিশ বলছে, ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার বেম্বোশ্যুট রেস্টুরেন্টে ৫ জন একইসঙ্গে বসে মদপান করেছিলেন। সেখানে মৃত তরুণী, তার বান্ধবী নেহা ও বন্ধু আরাফাত অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি রাতে ধানমন্ডির সিটি জেনারেল হাসপাতালের আরাফাতের মৃত্যু হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাথমিক রিপোর্টে মদপানে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর আসামি নোহাত আলম তাফসীরের মোহাম্মদপুরের বাসায় মেয়েটির সঙ্গে মর্তুজা রায়হান চৌধুরী শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরে মেয়েটি আরও অসুস্থ হয়ে গেলে ৩১ জানুয়ারি ভোরে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান কলেজ হাসপাতারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে, মূলত কি কারণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে তা জানা চেষ্টা চলছে। আসামি নেহা ও তার সঙ্গে থাকা যুবকের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি আমরা।

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। রেস্টুরেন্ট ও মোহাম্মদপুরের ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি আরও বিভিন্ন তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। এদিকে পলাতক দুই আসামি নেহা ও তার বন্ধুকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

ধর্ষণের পর তরুণীকে হত্যা করা হয়েছে? না কি অতিরিক্ত মদপানে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে? তা আমরা বলতে পারছি না। তরুণীর মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে বলা যাবে-যোগ করেন ওসি আব্দুল লতিফ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরা বেম্বোশ্যুট রেস্টুরেন্টে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও মোহাম্মদপুরে গ্রেফতার আসামি তাফসীরের বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী ও গ্রেফতার আসামিদের মোবাইলফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) সংগ্রহ করে সেই সূত্র ধরে বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, আসামি নেহাকে গ্রেফতারের জন্য ঢাকায় পুলিশের একাধিক টিম চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা মিরপুরে নেহার বাসার ঠিকানা পেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাকে খুঁজে পাইনি। নেহার বাবা-মা বা তার স্থায়ী কোনো ঠিকানা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে, তাকে খুঁজে পাওয়া গেলে অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবককেও গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতেও অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। কারণ ঘটনার দিন মদপানে নেহাও অসুস্থ হয়েছিলেন। এখন তিনি জীবিত বা কোনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন কিনা সেটিও জানতে চেষ্টা চলছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাজেদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত চলছে। আমরা মামলার বাকি দুই আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুত তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে।

মামলার আসামি আরাফাতের কবর শনাক্ত: 

মৃত তরুণী ও তার সহপাঠী গ্রেফতার মর্তুজা রায়হান চৌধুরীর সঙ্গে রাজধানীর হাতিরপুরে দেখা করে মদের পার্টির দাওয়াতটি দেন আরাফাত। প্রথমে পার্টির স্থান ছিল গুলশানে পরে স্থান পরিবর্তন হলে দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে আরাফাত চলে যায় উত্তরার ওই রেস্টুরেন্টে। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন নেহা ও তার এক বন্ধু। তার পাঁচজন মিলে ওই রেস্টুরেস্টে মদ পান করেন। এরপর প্রথমে নেহা অসুস্থ হয়ে রেস্টুরেন্টের টয়লেটে বমি করেন। অসুস্থ হয়ে নেহা ও তার বন্ধু চলে যায়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী তরুণীও বমি করেন। এদিকে তার বন্ধু আরাফাতও অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতে ভুক্তভোগী তরুণী, রায়হান ও আরাফাত রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যান এবং গুলশান পর্যন্ত একসঙ্গে গিয়ে আরাফাত চলে যায়। অপরদিকে তরুণী ও রায়হান মোহাম্মদপুরের তার বান্ধবীর বাসায় চলে যায়।

হাতিরপুল থেকে উত্তরা ওই রেস্টুরেন্টে মদপান এবং সেখান থেকে ফিরে যাওয়া পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন আরাফান। এ ঘটনায় আরাফাতের বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না পুলিশের কাছে। ৩১ জানুয়ারি দুই আসামি গ্রেফতারের পর পুলিশ জানতে পারে ৩০ জানুয়ারি রাতে আরাফাত মারা গেছে। তবে, তার দাফন কোথায় হয়েছে তার খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। তদন্তের একপর্যায় সোমবার (২ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডির সিটি জেনারেল হাসপাতালের ও তার স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারে মৃত্যুর পর আরাফাতকে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থনে দাফন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আরাফাতের কবর শনাক্ত করেছি, তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্তের স্বার্থে যদি প্রয়োজন হয় তবে, আরাফাতের মরদেহ কবর থেকে তোলার আবেদন করা হবে।  

এর আগে রোববার (৩১ জানুয়ারি) ভোরে রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মৃত মেয়েটির বাবা মোহাম্সদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ওই তরুণীকে মদপান করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার কথা বলা হয়েছে। ধর্ষক হিসেবে আসামি করা হয়েছে নিহত তরুণীর সহপাঠী মর্তুজা রায়হান চৌধুরীকে। এছাড়াও এতে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- নোহাত আলম তাফসীর (২১), আরাফাত (২৮), নেহা (২৫) ও তার বন্ধু। এদিকে মামলায় দুই আসামি মর্তুজা রায়হান চৌধুরী ও নোহাত আলম তাফসীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও অতিরিক্ত মদপানের কারণে মামলার এক আসামি গত শনিবার (৩০ জানুয়ারি) আরাফাত রাজধানীর সিটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১
এসজেএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।