খুলনা: পড়ন্ত বিকেলে গোধূলির ক্লান্ত প্রকৃতি। মৃদু-মন্দ মাঘের হিম হিম বাতাস।
শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সের কাজ প্রায় শেষ। এখন অপেক্ষা শুধু উদ্বোধনের। উদ্বোধন না হলেও প্রতিদিন চলে এখানে সাংস্কৃতিক কর্মীদের আড্ডা ও অনুশীলন।
শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে অনুশীলন করতে আসা শিক্ষার্থীরা এমন উন্মুক্ত পরিবেশ পেয়ে ভীষণ খুশি।
সুপলা রায় নামে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে অনুভূতি বলতে গেলে খুবই ভালো লাগছে। নতুন ভবনে এসেছি। যখন পুরোনো ভবনে ছিলাম। একটু কষ্ট হতো। ছোটো জায়গা ছিলো। স্টুডেন্ট কম হলে সমস্যা হতো না। স্টুডেন্ট বেশি হলে বসার প্রবলেম হতো। গুমোট একটা জায়গা এবং মশার উপদ্রপ ছিলো। তাছাড়া অনেক ধরনের প্রবলেপ ফেস করতে হতো। এখন একটা উন্মুক্ত জায়গা পেয়েছি। মন খুলে গান গাওয়ার যে স্বাধীনতা তা পেয়েছি। এ জন্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে গান গাইতে ও এখানে এসে গান শিখতে অনেক ভালো লাগছে। আশা করি যারা আসবে তারা আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবে।
অয়ন মজুমদার নামে অপর এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আগে যেখানে ছিলাম সেখান থেকে বড় পরিসরে এসে আমরা খুব আনন্দিত। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি এমন একটি মুক্ত পরিবেশে পাঠ দান করতে পেরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহানগরীর শেরে বাংলা রোডে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি করা হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স। এখানে পুকুরের উপর স্থাপন করা হয়েছে বিশাল মুক্তমঞ্চ। চার তলা প্রশাসনিক ভবন, ৫০০ আসন সুবিধা সম্বলিত মিলনায়তন, আর্ট গ্যালারি, লিংক করিডোর ও সীমানা প্রাচীর।
এছাড়া রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়া ও ডরমেটরি। এসব স্থাপনায় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কোথাও মাটির টালি, কোথাও মার্বেল, কোথাও গ্রানাইট বসানো হয়েছে। এখানে আসলেই মনে হবে যেন কোনো স্বপ্ন সুন্দরী আঁচল পেতে অপেক্ষায় আছে বরণের। উদ্বোধন না হলেও প্রতিদিন অনিন্দ্য সুন্দর আর দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপত্য শিল্প দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন এখানে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মীসহ খুলনাবাসী দাবি ও আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছিলো একটি আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স স্থাপনের। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার খালিশপুরে জনসভায় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির আধুনিক ভবন এবং অডিটোরিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নগরীর শেরে বাংলা রোডের পুরাতন নার্সিং ইনস্টিটিউটের জায়গায় ৮০ শতক জমিতে বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসিটিএই ইলোরা জেভি এই প্রকল্পটির কাজ পায়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি কাজ। পরে প্রকল্প ব্যয় ৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
নগর নাট্যদলের নাট্য পরিচালক কামরুল কাজল বাংলানিউজকে বলেন, কমপ্লেক্সটি যত দ্রুত সম্ভব উদ্বোধন করা প্রয়োজন। উদ্বোধনের অপেক্ষায় মুখিয়ে আছেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তবে উদ্বোধনের আগে কমপ্লেক্স রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গার্ড, পুলিশ ও সিসি ক্যামেরার প্রয়োজন।
আব্বাসউদ্দীন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, খুলনার সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনাময় শিল্পী রয়েছে, কিন্তু অর্থনৈতিক সামর্থ্য সেই তুলনায় খুবই কম। এজন্য শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চটি খুলনার সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনের এবং শিল্পীদের বিকাশের জন্য বা তাদের কাজগুলোকে দর্শকের সামনে তুলে আনার জন্য এই মঞ্চটিকে অত্যন্ত গতিশীল থাকতে হবে। এর ভাড়া সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত। তাহলে সবাই ব্যবহার করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব এটা উদ্বোধনের দাবি জানান স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সুজিত কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে সেখানে আগে পুকুর ছিলো। পুকুরটিকে রেখে তার উপরে মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। পুকুরের উপর মুক্তমঞ্চ এটা দেশে প্রথম। এ মঞ্চে এক সঙ্গে প্রায় ৫শ জন বসতে পারবে। ঠিকাদারের কাছ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নবনির্মিত শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স বুঝে নেওয়া হবে।
উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়সহ মন্ত্রণালয়ে অফিসিয়াল চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলেই উদ্বোধনের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১
এমআরএম/আরএ