ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংসার চলে কামলা খেটে, অসুস্থ হলে কে দেখবে আনজুয়ারাকে?

সোহাগ হায়দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১
সংসার চলে কামলা খেটে, অসুস্থ হলে কে দেখবে আনজুয়ারাকে?

পঞ্চগড়: পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১ নম্বর অমরখানা ইউনিয়নের মধুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনজুয়ারা। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে তার সুখের সংসারে আসে একটি ছেলে সন্তান।

সন্তান জন্ম নেওয়া ৯ মাসের সময় নবজাতক শিশুসহ আনজুয়ারাকে ছেড়ে নতুন বিয়ে করে অন্যত্র পালিয়ে যান স্বামী ইব্রাহিম। এরপর থেকে জীবনযুদ্ধে কামলা খেটে সংসারের হাল ধরেন আনজুয়ারা।  

থাকার জায়গা না থাকায় কামলা খেটে প্রায় ১০-১৫ বছর আগে নিজে ৮ ডেসিমাল জমি কিনে গড়ে তোলেন নিজের ছোট একটি বাড়ি। তবে জমি কিনে কোনো মতে বাড়ি বানালেও বসবাসে প্রায় অযোগ্য সেই ঘরটি। অন্যদিকে, একাকিত্ব জীবনে পেটের ক্ষুধা নিবারণে স্থায়ী কাজ না পেয়ে গত ৩ বছর আগে সেই ছোট বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ঐতিহ্যবাহী এক ঢেঁকি। এই ঢেঁকিতেই চলছে আনজুয়ারার জীবন।

সরেজমিনে মধুপাড়া গ্রামে আনজুয়ারার বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, জীবনযুদ্ধে তার বসবাস ও চলাচলের অবস্থা। অভাব হলেও স্বামী ও ছেলে হারা (ছেড়ে চলে যাওয়া) আনজুয়ারা ৮ ডেসিমাল জমির ওপর কোনো মতে এলোমেলোভাবে পলিথিন, ছেড়া বস্তা, বাঁশের বেড়া ও কিছু টিন দিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজ প্রাসাদ। জীবনের ঘানি টানতে বাড়ির পেছনে টিউবঅয়েল পাড়ের পাশে গড়ে তুলেছেন চালের গুড়ো করা ঐতিহ্যবাহী এক ঢেঁকি। এর মধ্যে কথা হয় আনজুয়ারার সঙ্গে।

আনজুয়ারা বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী-সন্তান অন্যত্র চলে যাওয়ার পর জীবন বাঁচাতে নেমে পড়ি কাজ খুঁজতে। একসময় পাথর ক্রাশিং মেশিনে কাজ শুরু করি। এর পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনসহ বিভিন্ন লোকের বাড়িতে কামলা দিতে থাকি। বর্তমানেও কামলা দিচ্ছি, তবে কামলার মধ্যে স্থায়ীভাবে ছোট একটি ঢেঁকি বসিয়ে একায় কাজ করি। চাল কিনে ঢেঁকিতে দিনে ৪-৫ কেজি করে গুড়ো করি। এরপর সেই গুড়োয় ভাকা (ভাপা পিঠা) তৈরি করে বিভিন্ন গ্রামে বিক্রি করে ২-৩শ’ টাকা আয় হয়। আর ওই টাকায় নিজের খরচসহ বাড়ির কাজ করি।

তিনি বলেন, বর্তমানে কাজ করতে পারছি। যখন অসুস্থ হবো তখন আমার কি হবে। আমি সাহায্য পাওয়ার আশায় অনেকবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে গেছি। কিন্তু কেউ আমার সাহয্য করেনি। প্রধানমন্ত্রী তো গরিবদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে, আমি প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাক কিছুটা সহায়তা করেন।

এদিকে, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানবেতর জীবনযাপন করছেন আনজুয়ারা। কাজে না গেলে কোনো দিন বাড়ির চুলাও জ্বালাতে পারে না সে। বর্তমানে তার একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে ঢেঁকি। এই ঢেঁকিতে গুড়ো করে তা পিঠা তৈরি করে বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত করছে।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আনজুয়ারার বাড়িতে গিয়ে তাকে কম্বল দিয়েছি। আগামী এক মাসের মধ্যে তাকে নতুন ঘর দেওয়া হবে। আশা কনরছি আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঘরের কাজ শুরু হবে। ভাতার আওতায় যেটা আসে সেটা আমরা দিবো এবং সঙ্গে আমি নিজে আর্থিকভাবে সহায়তা করবো যাতে তিনি ভালোভাবে থাকতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।