ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিগত ৫ বছরে পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি, বঞ্চিত কলাপাড়া পৌরবাসী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১
বিগত ৫ বছরে পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি, বঞ্চিত কলাপাড়া পৌরবাসী ...

পটুয়াখালী: বঙ্গোপসাগরঘেঁষা উপকূলীয় জনপদ কলাপাড়া। এই পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে ইভিএমে।

এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ভোটারদের মধ্যে। কাকে এবার মেয়র নির্বাচিত করবেন তা নিয়ে শেষ মুহূর্তে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বর্তমান মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদারকে ফের, নাকি নতুন কাউকে নির্বাচন করবেন তা নিয়ে খেরোখাতা খুলে বসেছেন পৌরবাসী।

বিগত একযুগ ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও পর্যটননির্ভর উপজেলা কলাপাড়ায়। তবে গোটা উপজেলার নানাবিধ উন্নয়নের সঙ্গে সম্ভাবনাময় এ পৌর এলাকাতেও পরিকল্পিত উন্নয়ন চান স্থানীয়রা।  

...স্থানীয় বাসিন্দা খালিদ হোসেনের মতে, গেলো পাঁচ বছর উন্নয়নমূলক অনেক কর্মকাণ্ডই হয়েছে কলাপাড়ায়। তবে সেগুলো পরিকল্পিত নয়। আর পরিকল্পিত উন্নয়ন না হওয়ার কারণেই তেমন কোনো সুফল দেখতে পাননি কলাপাড়া পৌরসভার বাসিন্দারা।  

তিনি বলেন, রাস্তা-ঘাট, ড্রেনসহ পৌর এলাকায় নানান উন্নয়ন হয়েছে। তবে সেগুলো পরিকল্পিত ও মানসম্মত হয়নি, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে করা হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে উপকূলের এ পৌরসভার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।  

ছোট এই পৌর এলাকায় যে হারে অটোরিকশার বৈধতা দেওয়া হয়েছে, তাও পরিকল্পিত নয়। দেখলে মনে হয়, সড়ক ও মানুষের চেয়ে অটোরিকশার সংখ্যাই বেশি। যে কারণে বিশেষ বিশেষ সড়কে চলতে গিয়ে এখনই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। এছাড়া ট্যাক্স বাড়লেও বাড়েনি যথাযথ নাগরিক সুবিধা। এখনো পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক ভাঙাচোরা। আবার পৌর এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী এখনো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়নি ময়লা ফেলার নির্ধারিত ডাস্টবিনের। ফলে পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় দেখা মেলে ময়লা-আবর্জনার অপরিকল্পিত ভাগাড়।

...তরুণ প্রজন্মের ভোটার মাহবুব বলেন, বর্তমানে পৌর এলাকার অনেক রাস্তায় কাজ করার কয়েকমাস পরেই খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। যেমন কলেজের পেছনের রাস্তাটি করার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে সেটিতে আবারো খানাখন্দের সৃষ্টি হয়, ফলে টেকসই উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ।  

তিনি জানান, দখলসহ নানান কারণে পৌর এলাকার খালগুলো দিন দিন সরু হয়ে এলেও তা সংরক্ষণে উদ্যোগ দেখা যায়নি। আবার অনেক খাল সংস্কার ও পরিষ্কারের অভাবে নালায় পরিণত হয়েছে। যেখানে ময়লা-আবর্জনা আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে মশার উপদ্রব বাড়িয়েছে। যা পৌর এলাকার অনেক জলাশয়েও দেখা মিলবে।

দিন দিন মোটরসাইকেলসহ পৌরবাসীর ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, এখনই সময় পায়রা বন্দর ও সাগরকন্যা কুয়াকাটার মধ্যবর্তী কলাপাড়া পৌরসভার সড়ক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার। কিন্তু পরিকল্পনা না থাকায় গেলো পাঁচ বছরে পৌর এলাকায় নির্বিঘ্ন যানবাহন চলাচলের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বড় করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শাখা সড়কের বাঁকগুলোও ঝুঁকিমুক্ত নয়। ঢালবিহীন ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন জায়গাতেই ময়লা আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেও এগুলো নিয়েও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উন্নয়ন কম হলেও নিজের বসবাসের বাড়ির সামনের সড়ক, বাগান বাড়ির পাশ দিয়ে সড়ক তৈরি, বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো এবং খালে বক্স কালভার্টের টেন্ডার দেওয়ার মতো কাজগুলো সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার। পাশাপাশি পৌর এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার তার আমলে নিজ স্বজনদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। যদিও এক্ষেত্রে কাগজপত্রে কোনো গাফিলতি ও প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। আর এসব বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কথা বলতেও আগ্রহী নন কেউ।

৪০-৪৫ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং যথানিয়মে ট্যাক্সও দিয়ে আসছেন জানিয়ে মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার এসব বিষয়ে বলেন, আমার বসবাসের বাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়ক নিজের অর্থেই তৈরি করেছি। পৌরসভার কোনো টেন্ডার হয়নি। আর ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন বাড়ির সামনের যে রাস্তাটি রয়েছে, সেটির উপকারভোগী আমি বাদে আরো অনেক পরিবার। সেখানে খালের ওপর বক্স কালভার্টের একটি টেন্ডার হয়েছে, এখনো কাজ শুরু হয়নি।  

তিনি বলেন, আমার কোনো লাইসেন্স নেই। আমারা ভাই হীরা হাওলাদার স্বপনের আগের একটি লাইসেন্স রয়েছে, তবে তিনি কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন না। আর তাপস কুমার সরকার আমার ভাগিনা। সে বিদেশ থাকতো, বর্তমানে মহিপুরের বাসিন্দা। সে কাগজপত্র ঠিক রেখে পৌরসভার টেন্ডারে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পায়, কোনো স্বজনপ্রীতি করা হয়নি।

তার মেয়াদকালে পৌরসভার সব কাজ যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয়েছে এবং প্রতিটি কাজের ভাউচার রাখা হয়েছে। কোনো বাড়তি ব্যয় কিংবা নিয়ম বহির্ভূত ব্যয় করা হয়নি বলেও জানান মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার।  

তিনি বলেন, আমার আমলে কোটেশনে সর্বোচ্চ (পৌরসভা থেকে ইউএনও অফিস পর্যন্ত) ৮ লাখ টাকার একটি রাস্তার কাজ করা হয়েছে।  

এছাড়া তার আমলে পৌর এলাকায় সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

আরো পড়ুন>
** কুয়াকাটার প্রভাব কলাপাড়ায়, পাল্টাতে পারে হিসাব-নিকাশ 
** জমি বাড়লেও কৃষিখাতে আয় বাড়েনি মেয়র বিপুলের

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২০
এমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।