ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হিজল-করচে সাজবে মৌলভীবাজারের হৃৎপিণ্ড কুদালিছড়া

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১
হিজল-করচে সাজবে মৌলভীবাজারের হৃৎপিণ্ড কুদালিছড়া কুদালিছড়ায় খনন কাজ চলছে। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের হৃৎপিণ্ড হিসেবে খ্যাত কুদালিছড়ায় নৈসর্গিক সৌন্দর্য বাড়াতে লাগানো হবে হিজল-করচ গাছ। খালের দু’পাড়ের বাঁধের উপর ড্রেসিং করা কাঁচা রাস্তায় শোভা পাবে এসব গাছ।

কুদালিছড়া খালের দু’পাড়ে হিজল-করচ লাগানো হলে খালের দু’দিকের হাওর থাকায় প্রকৃতিতে তৈরি হবে ভিন্নমাত্রা।  

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কুদালিছড়া ফিরে পাবে তার আগেকার ভরা যৌবন আর নৈসর্গিক সৌন্দর্য, এমন ধারণা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।   

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর, মোস্তফাপুর ও নাজিরাবাদসহ তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষকের কাছে হৃৎপিণ্ডের মতো কুদালিছড়া খাল। এই তিন ইউনিয়নের কৃষকদের সেচ কাজের একমাত্র অবলম্বন এটি। খালটি কয়েক যুগ ধরে খনন না করায় ধীরে ধীরে হারাতে থাকে তার অতীত ঐতিহ্য। বর্ষায় একদিকে শহর আর অপরদিকে পাহাড়ের উঁচু টিলা থেকে নেমে আসা পানি-বর্জ্যে হাওর আর খাল কালের পরিক্রমায় একাকার হতে শুরু করে। হাওরজুড়ে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধায় নষ্ট হয় কৃষকের কষ্টের ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হন কয়েক হাজার কৃষক। খালটি অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকে বছরের পর বছর।  

এই হাওরের অতীত ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধ। একটা সময় ছিল, যখন ভরা যৌবনে ভরপুর এই কুদালিছড়া দিয়ে নৌকা চালিয়ে বর্তমান সময়ে বিলুপ্ত প্রায় নানান রকমের দেশীয় মৎস্য আহরণ করে নিজেদের খাবারের প্রয়োজন মেটাতেন এ অঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলো। বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে এক গ্রামের মানুষের সঙ্গে অন্য গ্রামের মানুষের যোগাযোগের গল্পও শোনা যায় লোকমুখে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২ নম্বর গিয়াসনগর ইউনিয়নের ভূজবল অফিস বাজার এলাকা থেকে ছিকরাইল পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার জায়গাজুড়ে খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।  

৬৪ জেলার ছোট নদী-খাল ও জলাশয় খনন প্রকল্পের মাধ্যমে এক কোটি চার লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে যেটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ২০ জানুয়ারি এই প্রকল্প কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ।  

এরপর থেকে দ্রুতগতিতে তিনটি এক্সেভেটর দিয়ে শুরু হয় খাল খননের কাজ। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক্সেভেটর দিয়ে খালের ৭ মিটার গভীর থেকে জমে থাকা মাটি তুলে ফেলা হচ্ছে পাড়ে। এই মাটি দিয়েই দু’পাড়ে তৈরি হচ্ছে বাঁধ। পরে বাঁধ ড্রেসিং করে তৈরি হবে কাঁচা রাস্তা। বর্ষায় বাঁধ যাতে ভেঙে না যায় তার জন্য বাঁধের উপর দিয়ে তৈরি হওয়া রাস্তায় সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো হবে হিজল-করচ। খাল খনন, বৃক্ষ রোপণ এবং রাস্তা ড্রেসিং- এই তিনটি কাজ বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকারা পুরো চিত্র পাল্টে গিয়ে তৈরি হবে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাও।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১৫ মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।  

সম্প্রতি দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত হয়েই সরেজমিনে কুদালিছড়া খনন কাজ দেখতে আসেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান। এসময় মেয়র বলেন, কুদালিছড়া মৌলভীবাজারের প্রাণ, মৌলভীবাজারের মানুষের হৃৎপিণ্ড। এই কুদালিছড়া দীর্ঘদিন অবহেলা-অযত্নে ভরাট হয়নি। সেই কুদালিছড়া বিআইডিসি প্রথমে খনন করে আর পৌরসভার অংশ পৌরসভা খনন করে।  

তিনি বলেন, এই খাল খননের কারণে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়বে। আমরা যদি মনু নদী থেকে একটি ক্যানেল করে পানি কুদালিছড়ায় দিতে পারি তাহলে কৃষিতে ব্যাপক বিপ্লব হবে মৌলভীবাজারে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ফরহাদ জানান, কুদালিছড়ার সঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে মনু নদীর একটা কানেক্টিং সোর্স হবে। মৌলভীবাজার শহরের পৌর এলাকায় যে জলাবদ্ধতা থাকে সেটা নিষ্কাশন হবে এই কুদালিছড়ার মাধ্যমে।  

এদিকে দীর্ঘ চার কিলোমিটার খাল খনন শেষে বর্ষায় বাড়বে মৎস্য উৎপাদন, চাষাবাদ। আর বর্ষা মৌসুমে শহরের যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তা দ্রুত নিষ্কাশন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে এই খাল খননের প্রয়োজন পড়বে না বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।