ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক কেজি দুধ বেচে সংসার চলে আসির-জুলেখা দম্পতির

সোহাগ হায়দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১
এক কেজি দুধ বেচে সংসার চলে আসির-জুলেখা দম্পতির স্বামী আসির উদ্দীন ও স্ত্রী জুলেখা বেগম। ছবি : বাংলানিউজ

পঞ্চগড়: শতবর্ষী স্বামী আসির উদ্দীনকে নিয়ে বসবাস জুলেখা বেগমের (৬২)। শ্বশুরবাড়ি না থাকায় বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে বাবার ভিটেতে ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন জুলেখা।

তাদের সংসারে জন্ম হয় এক কন্যা সন্তানের। স্থানীয়দের সহযোগিতায় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন সাবালিকা হওয়ার পরেই।  

এদিকে প্রায় ৫০ বছর ধরে বাবার ভিটেতে কোনো মতে স্বামীকে নিয়ে দিন অতিবাহিত করলেও বর্তমানে বয়সের ভারে থমকে গেছে তাদের জীবনযাপন। উপার্জন করার মতো কেউ না থাকায় জীবনধারণ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে জুলেখা আসির দম্পতির। পালন করা একটি গাভীর  এক কেজি দুধ বিক্রি করে সেই টাকায় দিন অতিবাহিত করছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি।  

অপরদিকে জুলেখা নিজে শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও আরো বিপাকে পড়েছেন শতবর্ষী এক পা অচল স্বামীকে নিয়ে। জুলেখা আসির দম্পতির অভিযোগ একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সরকারিভাবে থাকার জন্য একটি ঘর বরাদ্দ তো দূরে থাক ১০ টাকা কেজি দরের সরকারি চালও পাননি তারা।

জানা গেছে, প্রায় ১৮ বছর আগে এনজিও ব্র্যাক থেকে সহায়তা হিসেবে একটি গাভী পেয়েছিলেন এই দম্পতি। গাভীটি লালন-পালন করে সেই গাভীর দুধ বিক্রি করে তা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন। কখনো এক পোয়া, কখনো হাফ কেজি আবার কখনো এক কেজি দুধ পান গাভীটি থেকে।  

এদিকে গরুর দুধ না হলে পালিত মুরগির কয়েকটি ডিম বিক্রি করে কোনো মতে খাবার জোগার করেন তারা। তবে মাঝে মধ্যে মেয়েজামাই কিছুটা সহায়তা করলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দিঘলগাঁও (শিপাইপাড়া) গ্রামে ওই দম্পতির বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি টিনের চালার ঘরে বসবাস করছেন তারা। ঘরের বেড়ায় অনেক ফুটো, একদিক দিয়ে কোনো মতে পলিথিন দিয়ে ফুটো বন্ধ করে বসবাস করেন তারা। এমনকি বাড়িতে নেই তেমন স্যানিটেশন ব্যবস্থা। কাপড় দিয়ে ঢাকা ল্যাট্রিন ব্যবহার করছেন তারা। অপরদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে না পারায় রাতে কুপি বাতি ব্যবহার করতে হয়।

জুলেখা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বিয়ের পর বাবার ভিটার এক পাশে স্বামীকে নিয়ে বসবাস করে আসছি। বর্তমানে স্বামী বয়সের ভারে পুরোই অচল। কোনো কাজ কর্ম করতে পারেন না। এদিকে আমিও শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তেমন কোনো কাজ করতে পারছিনা। ছেলে সন্তান না থাকায় একটি মাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আমরা দুজনে বাবার ভিটাতেই আছি। একটি ঘরের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়রম্যান ও মেম্বরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনো খবর নেয়নি তারা। একসময় মুড়ি ভেজে বাড়িতে বিক্রি করলেও বর্তমানে চোখে তেমন দেখতে না পাওয়ায় মুড়ি ভাজাও বন্ধ করে দিয়েছি। এখন গরুর দুধ বিক্রি করে দিন অতিবাহিত করছি। মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্নভাবে গরিবদের সহায়তা করছেন, যদি তিনি শেষ বয়সে আমাদের সরকারিভাবে একটি ঘর দিয়ে সহায়তা করেন তা হলে শেষ সময়টুকু একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।

শতবর্ষী শারীরিক প্রতিবন্ধী আসির উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, সুস্থ জীবনে পাথর উত্তোলনসহ কামলার পাশাপাশি মানুষের জমিতে কৃষিকাজ করে জীবন অতিবাহিত করেছি। বর্তমানে বৃদ্ধ এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় কিছু করতে পারছিনা। যেটুকু করার আমার স্ত্রী (জুলেখা) করে থাকেন। মাঝে মধ্যে গরুর দুধ দোয়াতে স্ত্রীকে সহায়তা করি এই যা।  

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আসির উদ্দীন শতবর্ষী হলে তাকে ভাতা দেওয়া হবে। আমরা সরেজমিনে দেখে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।