মেহেরপুর: এক কোটি চার লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিবনগর-কলকাতা স্বাধীনতা সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মেহেরপুর এলজিইডির তত্ত্বাবধানে এ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন কুমার।
মুজিবনগর থেকে ভারতের নদীয়ার কৃষ্ণনগর পর্যন্ত দেড়শ কিলোমিটার সড়কের মাত্র ৩০০ মিটার ইটের হিয়ারিং সোলিং রয়েছে। বাংলাদেশের অংশের এই তিনশ মিটার কাজ করা হবে।
মুজিবনগরে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস চেকপোস্ট স্থাপনের লক্ষ্যে মেহেরপুরে মুজিবনগর স্বাধীনতা সড়ক (মুজিবনগর-কলকাতা) নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এ সড়কের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক যেমন মজবুত হবে তেমনি এলাকার উন্নয়ন হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সড়কের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
এটি বাস্তবায়িত হলে মেহেরপুর জেলাবাসীর জন্য উন্মেচিত হবে অর্থনীতির নতুন দীগন্ত। নদীয়া জেলার চাপড়া থানার হৃদয়পুর, নতুনপাড়াসহ আশপাশের গ্রামবাসীরাও উন্মুখ সেই কাঙ্ক্ষিত ক্ষণটির জন্য।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অপরদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি। এই শুভক্ষণে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন মুজিবনগর-কলকাতা স্বাধীনতা সড়ক। আর এই সড়ক নির্মাণ উপলক্ষে বাংলাদেশের মুজিবনগরে ও ভারতের হৃদয়পুরে স্থাপন করা হচ্ছে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট।
দিনক্ষণ ঠিক থাকলে আগামী ২৬ মার্চ যৌথভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সড়ক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সম্ভাব্যতা যাচাই ও ঐতিহাসিক মুজিবনগরে স্বাধীনতা সড়ক (মুজিবনগর-কলকাতা) পরিদর্শন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঁচজনের একটি প্রতিনিধি দল।
গত ১৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ও ইমিগ্রেশনের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র, পরারাষ্ট্র ও এনবিআর, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল মুজিবনগর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন।
এছাড়া স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই সড়কটি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী সড়কটির নাম ঠিক করেছেন ‘স্বাধীনতা সড়ক’।
স্বাধীনতা সড়কটি মানসম্মতভাবে নির্মাণ করার লক্ষ্যে গত ১৪ জানুয়ারি মুজিবনগর পরিদর্শন করেছেন।
এ উদ্যোগের কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোতে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ‘মুজিবনগর-কলকাতা স্বাধীনতা সড়ক’ নিয়মিতভাবে চালু এবং ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন করার জন্য সব আয়োজন শেষ হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে এ সড়ক ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট উদ্বোধন করবেন। এ জন্য ইতোমধ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সড়কটি খুললে অনেক পর্যটকও আসবেন ঐতিহাসিক এই দর্শনীয় স্থান নিয়মিত পরিদর্শনে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, সড়কটি চালু ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন করতে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সে চিঠির আলোকে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের করণীয় নির্ধারণে সরকারি দফতরগুলোতে পৃথক চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ। মুজিবনগর-কলকাতা স্বাধীনতা সড়ক চালুর নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে অবহিত করা হয়েছে।
এর আগে স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ (মুজিবনগর-কলকাতা) নিয়মিতভাবে চালু করা এবং ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে গত বছরের ১০ আগস্ট চিঠি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তার স্বাক্ষরিত চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকেও।
এদিকে মুজিবনগর থেকে কলকাতা যাতায়াতের ঘোষণা আসার পর থেকে মেহেরপুরের সাধারণ মানুষ আনন্দের পাশাপাশি এখন দিন গুণছেন সেই মাহেন্দ্র ক্ষণটির জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১
আরএ