ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ডিসির কাছে আত্মহত্যার অনুমতি চাইলেন বৃদ্ধ 

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২১
ডিসির কাছে আত্মহত্যার অনুমতি চাইলেন  বৃদ্ধ  বিষের বোতল হাতে বৃদ্ধ মুসা। ছবি: বাংলানিউজ

মেহেরপুর: আমি জহর খাই ই মরবো। খুব কষ্ট কইরি ঘর কইরিলাম।

৭০ বছর ধইরি সেখানে বাস কইরিচি। এখন আমার সেই ঘরে থেকে বের করে দিছে। আমার জমি আমারে ফিরিয়ে দেন, নয়তো আমাকে বিষ পানের অনুমতি দেন। জেলা প্রশাসকের অফিসে গিয়ে এভাবেই মিনতি জানান বৃদ্ধ মুসা করিম।  

এসময় তিনি বিষপানের অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত আবেদনও করেছেন। তবে জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়ে আত্মাহত্যার পথে না গিয়ে যতদিন বেঁচে থাকবেন স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করার আহ্বান জানান।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে মুসা করিম তার নাতি আকাশকে (৮) সঙ্গে নিয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে এ আবেদন জানান।

বৃদ্ধ মুসা করিমের বাড়ি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামে।

মুসা করিম বলেন, আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে লাল চান্দের দুই স্ত্রী। তার প্রথম স্ত্রী শরীফা খাতুনের ছেলে আকাশ। শরীফাকে ভরণপোষণ না দেওয়ায় সে তার মা-বাবার বাড়িতে থাকে। লাল চাঁন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখন সংসার করছে।

আমার যে জমি জায়গা ছিল সেগুলো সবার নামে সমবন্টন করে দিয়েছি। অবশিষ্ট ৪ কাঠা জমির উপর বাড়ির জায়গাটি আমার অসহায় নাতি আকাশের নামে লিখে দিয়েছি। বিষয়টি জানতে পেরে আমার বড় ছেলে লালচাঁদের দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা খাতুন আমাকে ও আমার নাতি আকাশকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। পরে আমি আমার ছোট ছেলে আমির হোসেনের বাড়িতে বর্তমানে রয়েছি। কিন্তু সেখানে তাদেরও সমস্যা।  

অনেক জায়গায় ঘুরেছি কিন্তু কেউ আমাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি, যে কারণে বাধ্য হয়ে বিষের বোতল হাতে করে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানাতে এসেছি।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন মানব উন্নয়ন কেন্দ্রের (মউক) নির্বাহী পরিচালক আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেকবার মীমাংসার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তার অপর নাতি (লাল চাঁদের ছেলে) রিপন  হোসেন ও ফারুক হোসেন তাদের দাদা মুসা করিম সৎ ভাই আকাশকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। একপর্যায়ে বৃদ্ধ মুসাকে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছি।  

জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেছেন, জমি ও ঘর উনার (মুসার) নিজের। উনি যাকে ইচ্ছে দিতে পারেন। তাতে অন্যের কি বলার আছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখা হবে। শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ মুসা করিম জেলা প্রশাসকের আশ্বাস পেয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।