বাংলাদেশ এ বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে। একইসঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের ৫০ বছর উদযাপন করছে।
হামুদুর রহমান কমিশন শত শত ক্লাসিফায়েড নথি ও পূর্ব পাকিস্তানে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কার্যক্রম পর্যালোচনা করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করা জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীসহ প্রায় ৩০০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের ৫০ বছর পরেও পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়া ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু ভারতকে নয়, পূর্ব পাকিস্তানে শোষণমূলক শাসন ও গণহত্যার জন্য দোষ দেওয়া উচিত পাকিস্তানকেই।
হামুদুর রহমান কমিশন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানকে প্রধান করে গঠন করা হয়। কমিশন ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা নিয়ে তদন্ত করে। কমিশন পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়ার জন্য নির্বিচারে হত্যা, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, পাকিস্তানি জেনারেলদের ক্ষমতার অপব্যবহারকে দায়ী করে।
কমিশন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোর্ট মার্শালসহ কঠোর শাস্তির সুপারিশ করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক থেকে শুরু করে নির্বাচিত সরকার কেউ দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেননি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো এ কমিশেনের দেওয়া প্রতিবেদনের সব কপি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত প্রতিবেদনের একটি কপি রক্ষা সম্ভব হয়। এতে সারা বিশ্ব জানতে পারে আসলেই কী ঘটেছিল এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য কারা দায়ী ছিল।
ভুট্টোর অনুরোধেই ১৯৭১ সালে ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে এ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয় ১৯৭৪ সালের ২৩ অক্টোবর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের কারণ হিসেবে পাকিস্তানের নৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে কমিশন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে পুরো পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি আওয়ামী লীগকে। হামুদুর রহমান কমিশন তাদের প্রতিবেদনে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা কেন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সামরিক সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে বাধ্য হয়েছিলেন তার রাজনৈতিক কারণও ব্যাখ্যা করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১
নিউজ ডেস্ক