ঢাকা: যানজট নিরসনে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে উত্তরা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়কে নির্মাণ করা হচ্ছে ইউলুপ। নির্বিঘ্নে ইউটার্নের জন্য বিমানবন্দরের কাছে কাওলা ইউলুপে এর সুফল দেখা গেলেও তেজগাঁও সাতরাস্তা সড়কে থাকা ইউলুপ উল্টো ভোগান্তির কারণ হচ্ছে বলে দাবি চলাচলকারীদের।
২০১৬ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তৎকালীন মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউলুপ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেন। এই সড়কে ১০টি সিগন্যাল পয়েন্ট এবং ইউটার্ন নেওয়ার সংকীর্ণ কিছু পয়েন্টের ফলে প্রচুর জ্যাম হতো। ফলে এই স্বল্প দূরত্ব পার হতে যানবাহন ও যাত্রীদের কখনও কখনও নষ্ট হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়। এই সময় বাঁচাতেই ইউলুপের প্রকল্প নেওয়া হয়, যার মধ্যে দিয়ে উভয়পাশের সড়কের যানবাহন কোনোরকম বাধা ছাড়াই এবং অন্য যানবাহনের জন্য বাধা তৈরি করা ছাড়াই সড়ক পারাপার করতে পারবে।
পরবর্তীসময়ে ইউটার্নের জন্য ১০টি ইউলুপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এতে মোট খরচ ধরা হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা।
এগুলোর মধ্যে সম্প্রতি তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে নাবিস্কো মোড় পর্যন্ত দু’টি ইউলুপের কাজ শেষ হয়। একটি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল ও বিজি প্রেসের সামনে এবং অপরটি নাবিস্কো মোড়ে। তবে এসব ইউটার্নের ফলে সড়কের বাম পাশের লেন খুবই সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় উল্টো সেখানে তৈরি হচ্ছে যানজটের লম্বা সারি। বিশেষ করে ‘অফিস আওয়ার’ এ সড়কটি দীর্ঘ সময়ের জন্য রীতিমতো যেন থমকে থাকে। নাবিস্কো মোড় থেকে তেজগাঁও মোড় এবং তেজগাঁও থেকে নাবিস্কো মোড়; সড়কের উভয়পাশের চিত্র প্রায় একই। সংযোগ সড়ক ও ফ্লাইওভার থেকে নামা গাড়ির চাপ সেখানে বাড়তি যানজট সৃষ্টির সহায়ক।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ১০টা পর্যন্ত এই দু’টি ইউলুপে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। নাবিস্কো মোড় সংলগ্ন ইউলুপের কাছে এক মোটরসাইকেল আরোহী ইফতেখার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এই সড়কটি দিয়ে আগে বেশ আরামেই যাওয়া যেত। র্যাংস ফ্লাইওভারের গোড়ায় একটা সিগন্যালে পড়তাম আর তেজগাঁও মোড়ে একটা সিগন্যাল ছিল। এখন সকালে পুরো রাস্তাই ‘ব্লক’ থাকে। ইউটার্নের কারণে বামপাশের লেন খুবই চিকন (সংকীর্ণ) হয়ে গেছে। দেওয়া আছে দুই লেন কিন্তু আসলে এক লেন। যেসব গাড়ি ইউটার্ন করবে তাদের টার্নিংয়ের জন্য আমরা যারা সোজা যাবো তাদের বসে থাকতে হয়।
অন্যদিকে বিজি প্রেসের সামনে থাকা ইউটার্নে আরেক প্রাইভেটকার চালক ইব্রাহিম খলিল বলেন, এই সামনেই একটা সিগন্যাল, বামে যায় বিজয় সরণি। আগে বিজয় সরণি যাওয়ার জন্য একটা আলাদা লেন ছিল। যাদের সেদিকে যাওয়ার তারা ওই লেনে যেতো আর যাদের সোজা বা আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার তারা ডানে যেতো। এখন ইউটার্নের কারণে তেজগাঁও থেকে মহাখালীগামী গাড়িগুলোকেও আগে বাম লেনে আসতে হয়। ইউটার্ন পার হয়ে আবার ডান লেনে যেতে হয়। ফলে যে গাড়ি সোজা যাবে তাকেও বাম লেনে আসতে হয় আর বাম লেন যদি কোনো কারণে ব্লক থাকে তাহলে আমাদেরও এখানে বসে থাকতে হয়।
সংলগ্ন স্থান খুবই সংকীর্ণ রেখে ইউলুপ নির্মাণ করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেক গাড়িচালক। ইউলুপের জ্যামের কারণে কখনও কখনও ইউটার্নগুলো বন্ধ করে রাখা হয় বলেও পরিচয় গোপনের শর্তে জানান তেজগাঁও সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক কন্সটেবল।
তবে এসব বিষয়ে এখনই দায় নিতে নারাজ ডিএনসিসি। বরং পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ইউলুপের কার্যকারিতা নিয়ে মন্তব্য করা যাবে বলে মত প্রকল্প পরিচালকের।
ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখনও এই ইউটার্নগুলো চালু করিনি। এই সড়কের বনানী ওভারপাস থেকে তেজগাঁও মোড় একটি সেগমেন্ট এবং বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত একটি সেগমেন্ট। এই দুই সেগমেন্টেই এখনও অনেক ‘রাইট টার্ন’ আছে। এই রাইট টার্নগুলো বন্ধ করতে হবে। তেজগাঁও সড়কে আরও দু’টি ইউলুপ হবে। মোট আরও চারটি ইউলুপ বাকি আছে। এগুলো সব হয়ে গেলে, রাইট টার্ন বন্ধ হলে তারপর বলা যাবে যে, ইউলুপলো সফল নাকি ব্যর্থ। এখনই এর কার্যকারিত নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
এসএইচএস/এএ