ফেনী: ‘শুনেছি বঙ্গবন্ধুকন্যা অনেক মানুষকে ঘর দিয়েছেন। আমিও একটি ঘর চাই, ঘরটি পেলে আমার দুঃখ ঘুচতো, ছেলে-মেয়েগুলোকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই হতো, আর ভিক্ষা করতে হতো না’।
ফারুক জানান, জন্মের পর তিন মাস বয়সে টাইফয়েড হয়, সেই থেকেই বিকলাঙ্গ। আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠলেও শারীরিক অক্ষমতা কাটেনি। হাঁটাচলা ঠিকমতো করতে না পারায় পড়াশোনাও করা হয়নি। ভিক্ষা করেই এখন চলে তার সংসার। স্ত্রীসহ রয়েছে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আরেক ভাই জিয়াউল হকের পরিবারসহ চার কক্ষের একটি ঘরে থাকেন ফারুকের পরিবার। সেই ঘরটির জরাজীর্ণ অবস্থা। ঘরের একটি কক্ষে থাকেন ফারুকের বাবা-মা। আরেকটি ঘরে দুই সন্তানসহ ভাই জিয়াউল হকের পরিবার। একটি ঘরে চলে রান্না-বান্না। বাকি যে কক্ষটি রয়েছে সেটিতেই তিন সন্তান ও স্ত্রীসহ তারা পাঁচজন থাকেন।
ফারুক বলেন, বড় ছেলেটির বয়স ১০ বছর। তাকে মাদ্রাসায় পড়তে দিয়েছি। ছোট ছেলেটির বয়স ৫ বছর, মেয়েটার বয়স ১ মাস। কোনো ধরনের ঠাসাঠাসি করে এক কক্ষে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকছি। ছেলেরা বড় হচ্ছে তাদের আলাদা একটা ঘর দিতে পারছি না।
বেতুয়া (ছোট লালপুল) গ্রামের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক আগের দিনের পুরোনো টিনের ঘরে অনেক জায়গায় তৈরি হয়েছে ফুটো, সেই ফুটো দিয়ে ডুকছে বাতাস, এই শীতে সীমাহীন কষ্টে কাটছে তাদের জীবন।
প্রতিবন্ধী ফারুক বলেন, একটা ঘরই তার স্বপ্ন। উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার থেকে যে জায়গাটুকু পাবেন তাতে যদি কেউ একটা ঘর করে দিতো তাহলেই তার স্বপ্নপূরণ হতো।
প্রতিবন্ধী ফারুক স্থানীয় মজিবুল হকের ছেলে। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালে। ফারুকের বাবা জানান, তার বড় ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সে কাজ করে তার সংসার মোটামুটিভাবে চলে।
ছোট ছেলে ফারুক শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। ভিক্ষা করেই চলে তার সংসার। কোনো ধরনের একটা ঘর আর ব্যবসার জন্য অল্প কিছু পুঁজি পেলে ফারুকের আর ভিক্ষা করতে হতো না।
স্থানীয়, দাগনভূঞাঁ পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল হুদা সেলিম বলেন, ফরুক ঘরের জন্য আবেদন করেছেন। তিন দফা আর আবেদনটি পৌরসভায় পাঠানো হয়েছে কিন্তু বরাদ্দ আসেনি।
নুরুল হুদা সেলিম বলেন, দাগনভূঞাঁ পৌর মেয়র ওমর ফারুক জানিয়েছেন যারা ঘরের জন্য আবেদন করেছেন পর্যায়ক্রমে তারা সবাই ঘর পাবেন। এখন বরাদ্দ না এলেও ক্রমান্বয়ে বরাদ্দ আসবে। প্রতিবন্ধী ফারুক পৌরসভা, জেলা প্রশসানসহ সবার কাছে আবেদন জানান, তার ঘরটি যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করে দেওয়া হয়।
‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
এসএইচডি/এএটি