ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গোলাপ যেভাবে বদলে দিল বিরুলিয়া ইউনিয়নের নাম

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
গোলাপ যেভাবে বদলে দিল বিরুলিয়া ইউনিয়নের নাম গোলাপ যেভাবে বদলে দিল একটি ইউপির নাম-উন্নয়নের চিত্র। ছবি ও ভিডিও: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ফুলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফুলের রানি গোলাপ। এই ফুলে রয়েছে স্বর্গীয় এক সৌন্দর্য।

এর সুবাসের জন্য বিখ্যাত এই গোলাপফুল যে কত শক্তিশালী হতে পারে, তা সাভারের বিরুলিয়ার সাদুল্লাপুর গ্রামে গেলেই বোঝা যায়। গোলাপ ফুল বদলে দিয়েছে এ অঞ্চলের নাম, বদলে দিয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকা এবং উন্নয়নের চিত্র।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দিকে সাবেদ আলী নামে এক ব্যক্তি বিরুলিয়ার সাদুল্লাপুরে ফুল চাষ শুরু করেন। তখন ফুলের ফলন ভালো এবং অনেক লাভ হওয়ায়, পরবর্তীতে এ অঞ্চলে গোলাপ চাষের পরিমাণ বাড়াতে থাকে।


সাবেদ আলীর দেখানো পথে ধরে এলাকার কৃষক এবং বেকার যুবকরা গোলাপ চাষের সঙ্গে যুক্ত হন। ধীরে ধীরে বিরুলিয়া ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রামগুলোতেও গোলাপের চাষ বাড়তে থাকে। এভাবেই গোলাপ চাষের মাধ্যমে এলাকার মানুষের ভাগ্য দ্রুত বদলে যেতে থাকে। এখন এ অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দা গোলাপ চাষের সঙ্গে জড়িত। গোলাপ ফুল চাষের ফলে এই অঞ্চলের মানুষের অভাব অনটন যেমন ঘুচেছে, তেমনি মানুষের মুখে ফুটেছে হাসি।  

বিরুলিয়া ইউনিয়ন এখন সবার কাছে পরিচিত গোলাপ গ্রাম নামে। সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, আকরান, কমলাপুর, মোস্তাপাড়া ভাটুলিয়া, বাগ্মী বাড়ি গ্রামে এখন ব্যাপকহারে গোলাপের চাষ হয়। গ্রাম্য পথের দুই ধারে সারি সারি গোলাপ গাছ। মনে হয় সমগ্র এলাকাই যেন সাজানো হয়েছে টকটকে লাল গোলাপের ফুলে। ফলে পুরো এলাকাই যেন একটা বাগানে পরিণত হয়েছে, যার নাম হচ্ছে ‘গোলাপ গ্রাম’।

এই গ্রামের নামটি এখন এতটাই পরিচিতি লাভ করেছে যে, এই নামের কাছে চাপায় পড়ে গেছে এ এলাকার আদি এবং আসল নাম। আশ-পাশের যেকোনো স্থান থেকে যে কাউকে বললেই গোলাপ গ্রামের পথ দেখিয়ে দেবে।  

গোলাপে চাষ দিয়ে শুরু হলেও এখন এসব এলাকায় নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুলের চাষ হয়। মিরিন্ডা গোলাপ, চায়না গোলাপ, ইরানি গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্র মল্লিকা ফুলের চাষ হতে দেখা যায় এখানে।

ফুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন রাজধানীসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ফুলপ্রেমী লোকজন ছুটে আসেন বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে। ফলে এখানে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বিভিন্ন ফুলের দোকানসহ অন্যান্য পণ্যের দোকান, রেস্টুরেন্ট। পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থারও উন্নয়ন হয়েছে।  
দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে গোলাপ ফুলের চাষের সঙ্গে জড়িত শ্যামপুর গ্রামের মো. হাসান মিয়া।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখন মানুষ শ্যামপুর বা সাদুল্লাপুর নামে কেউ চিনে না, কিন্তু গোলাপ গ্রাম বললে দেশের সবাই একনামেই চিনে এই অঞ্চলকে। সব বিরুলিয়া ইউনিয়নই এখন ‘গোলাপ গ্রাম’ হয়ে গেছে।

একই এলাকার আলমাস উদ্দিন নামে আরেকজন বলেন, ঢাকা বা অন্যান্য জায়গা থেকে মানুষ এখানকার বিভিন্ন গোলাপ বাগানে ঘুরতে এসে ছবি তোলেন। পরবর্তীতে তারা এসব গোলাপ বাগানের ছবিগুলো ফেসবুক, ইউটিউব বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার করেন। ছবির সঙ্গে তারা এলাকার নামও প্রচার করেন। এভাবেই এ অঞ্চলের নাম ‘গোলাপ গ্রাম’ হয়ে ওঠে।  

 

গোলাপ চাষের ফলে এলাকার উন্নয়ন প্রসঙ্গে সাদুল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দা গোপাল প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, গোলাপ ফুল চাষের ফলে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের বদল হয়েছে, এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে। গোলাপ ফুল চাষের মাধ্যমে বেকার ছেলেদের কাজের সুযোগ হয়েছে। এখানকার প্রায় মানুষই এখন গোলাপের বাগানে কাজ করে না হয় গোলাপ কেনা-বেচা বা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।