ঢাকা: যানজট কমাতে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ইউলুপ প্রকল্পের প্রকৃত সুফল ভোগ করছেন রামপুরা, বনশ্রী, হাতিরঝিল এলাকায় চলাচলকারীরা। বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা ও উত্তরার ইউলুপে রয়েছে স্বস্তি।
বাড্ডা থেকে রামপুরা হয়ে মালিবাগ এবং মালিবাগ থেকে রামপুরা হয়ে বাড্ডা, প্রধান সড়কের দু’পাশে সড়কে নেই কোনো ক্রসিং। রামপুরা দক্ষিণ ইউলুপটিও চলে গেছে সড়কের ওপর দিয়ে ফ্লাইওভারের মতো। অর্থাৎ ওভারপাস। রামপুরা দক্ষিণ ইউলুপটি সরাসরি বনশ্রী, রামপুরা, হাতিরঝিলকে সংযোগ করেছে। এতে ইউলুপটি ব্যবহার করে চালকরা তাদের প্রয়োজনে রামপুরা ও হাতিরঝিলে খুব সহজেই চলে যেতে পারছেন।
স্থানীয় ও সড়কে চলাচলরত যানবাহনের চালকরা বলছেন, আগে এখানকার যানজটের কথা মনে হলে গাঁয়ে জ্বর এসে যেতো। কিন্তু রামপুরায় দক্ষিণ ইউলুপ নির্মাণ ও চালুর পর থেকে স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে যেকোনো যানবাহনই এই এলাকা দিয়ে বেরিয়ে (পাস) যেতে পারছে। বর্তমানে এই এলাকায় বিশেষ কিছু না হলে যানজট দেখা যায় না।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর রামপুরা দক্ষিণ ইউলুপে সরেজমিনে ঘুরে ও চারকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা যায়।
২০১৬ সালে ২৫ জুন হাতিরঝিল প্রকল্পের অধীনে রামপুরা দক্ষিণ ইউলুপ চালু হয়। এই ইউলুপটির উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের শুরুতে রামপুরা ব্রিজ-সংলগ্ন বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের সামনে এই ইউলুপের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নকশা অনুযায়ী ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ইউলুপের (সেতু) প্রস্থ কোথাও ৭ দশমিক ৭ মিটার, কোথাও ১০ দশমিক ৭ মিটার।
রামপুরা দক্ষিণ ইউলুপে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কাভার্ডভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহনের চলাচল রয়েছে। এই ইউলুপের পূর্ব পাশে বনশ্রী প্রধান সড়ক, পশ্চিম পাশে হাতিরঝিল ও বাড্ডা প্রগতি সরণি। চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর মাঝখানে আছে লেন বিভাজক সাদা দাগ।
বনশ্রী মূল সড়ক থেকে ইউলুপ চত্বর ঘুরে সেতুতে উঠলে নামতে হবে প্রগতি সরণি অথবা হাতিরঝিলের শ্রীশ্রী মহাপ্রভুর মন্দিরের সামনের সড়কে। ঠিক একইভাবে হাতিরঝিল থেকে সরাসরি ঢোকা যাবে প্রগতি সরণিতে। আর সেতুতে উঠলে নামতে হবে পূর্ব পাশের ইউলুপ চত্বরে। সেখান থেকে বনশ্রী মূল সড়ক ও প্রগতি সরণিতে ঢোকার জন্য আছে আলাদা লেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউলুপের বনশ্রী রামপুরা মূল সড়ক, প্রগতি সরণি রোড ও হাতিরঝিলের মুখে কোনো ধরনের যানজট দেখা যায়নি। নিয়মের মধ্য দিয়ে যানবাহনের চালকদের এই ইউলুপটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
মোটরসাইকেল চালক ইয়াসিন আরাফাত বাংলানিউজকে বলেন, লেনগুলো আলাদা ও ইউলুপে ওঠার রাস্তাটি একমুখী হওয়ার কারণে এখনে কোনো যানজটের সৃষ্টি হয় না।
এই মোটরসাইকেল চালক বসবাস করেন রামপুরা বনশ্রীতে। তিনি বলেন, প্রতিদিনই আমি ইউলুপ ব্যবহার করি। এখনে যানজট নেই। তবে ইউলুপ নির্মাণের আগে আমি রামপুরা ওয়াবদা এলাকায় থাকতাম। তখন যানজটের কারণে হাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বেশি সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হতো। কিন্তু এখন আর বেশি সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয় না।
রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রী রোডের একটি চায়ের দোকানি নজরুল বলেন, ইউলুপ হওয়ায় এখানে যানজট অনেক কমে গেছে। এছাড়াও বনশ্রী রামপুরার অনেক সৌন্দর্য বেড়েছে। আগে বনশ্রীর গাড়িগুলো বের হওয়ার জন্য একটি পথ ছিল। আর সড়কে রোড ক্রসিং ছিল। এখনে ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তার যানজট কমাতে কাজ করতো। এখন আর এই কষ্টটি হয় না। ইউলুপ দিয়ে বনশ্রী থেকে গাড়িগুলো তাদের প্রয়োজনে হাতিরঝিল ও প্রগতী সরণিতে খুব সহজেই চলে যেতে পারছে।
রামপুরা দক্ষিণ ইউলুপটি রাজধানীর সবচেয়ে প্রশস্ততম ও বড় ইউলুপ। এটি সড়কের উপর দিয়ে চলে যাওয়ার কারণে এই এলাকার সৌন্দর্যও বেড়েছে। যানজটমুক্ত চলাচলের জন্য এই ইউলুপটি অত্যন্ত কার্যকর বলে জানান চালকরা।
** সাতরাস্তা ইউলুপে উল্টো ভোগান্তি
** পরিকল্পিত কাওলা ইউলুপে স্বস্তি বিমানবন্দর সড়কে
** উত্তরা ইউলুপে যানজট কমলেও বেড়েছে ঝুঁকি
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
এসজেএ/এএ