ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বর্জ্য সংগ্রহে টেন্ডার, ধর্মঘটের আল্টিমেটাম পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
বর্জ্য সংগ্রহে টেন্ডার, ধর্মঘটের আল্টিমেটাম পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ফাইল ফটো

ঢাকা: রাজধানীর বিভিন্ন বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে বর্জ্য সংগ্রহে টেন্ডারের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। একটি বিশেষ পক্ষকে লাভবান করতেই এমন সিদ্ধান্ত অভিযোগ তুলে এর বিরোধিতা করছে প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি)।

আগামী সাত দিনের মধ্যে টেন্ডার পদ্ধতি বাতিল করা না হলে বর্জ্য সংগ্রহ না করে উল্টো ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।

জানা যায়, ২০০০ সালেরও আগে থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে আসছে। ২০০০ সালে সবগুলো সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান মিলে গড়ে তোলে পিডব্লিউসিএসপি। তখন থেকে বিভিন্ন স্থাপনা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশন, এসটিএস বা আবর্জনার গাড়িতে তুলে দেওয়ার কাজটি করছে এই সংগঠনের কর্মীরা।

তবে সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নিজেদের ওয়ার্ডে টেন্ডারের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে এই কাজটি সম্পাদনের দায়িত্ব দিয়েছে। একই পথে হাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি)।

আর এতেই আপত্তি পিডব্লিউসিএসপি এর। সংগঠনটির সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকী বাংলানিউজকে জানান, ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এমনটা করছে বর্তমান ডিএনসিসি প্রশাসন।  

লাকী বলেন, ২০১৫ সালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওয়ার্ডভিত্তিক সকল সংগঠনকে একত্রিত করে আবর্জনা নিয়ে কাজ করতে প্রত্যয়ন করার ক্ষমতা আমাদের সংগঠনকে দেওয়া হয়। বহু বছর ধরে প্রায় ১৯ হাজার কর্মী (ডিএনসিসিতে প্রায় ১০ হাজার) আমরা কষ্ট করে কাজ করে আসছি। কখনও সিটি কর্পোরেশন থেকে কোন সাহায্য পাইনি। ২০ থেকে ৩০ টাকা যা নিতাম সেগুলো দিয়েই নিজেদের খরচ চালিয়েছি, ময়লা টানার গাড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনেছি। আমাদের বিপদে আপদে, রোগে শোকে সিটি করপোরেশনের কাউকে কখনও পাইনি। তাদের ডাক্তারদের দিয়ে আমাদের কোন কর্মীর চিকিৎসা করানো যায়নি। আর আজ তারা একেবারেই আমাদের কাজ ছিনিয়ে নিতে চাইছে।

ময়লা সংগ্রহকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ রাজনৈতিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সুযোগ দিতেই সিটি করপোরেশন এমনটা করছে বলেও অভিযোগ নাহিদ আক্তার লাকীর। তিনি বলেন, ময়লা অনেক বড় একটা বাণিজ্য। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এনিয়ে সংবাদ হয়েছে। শুধু এতে ভাগ্য পরিবর্তন হয় না আমাদের, আমরা যারা এই শহরকে পরিষ্কার করি। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফোরকান (কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন) ইতোমধ্যে আগারগাঁও এলাকায় আমাদের কাজ দখল করে নিয়েছে।

টেন্ডারের মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহ করা হলে নগরবাসীর ভোগান্তি ও খরচ বাড়বে বলেও মনে করেন লাকী। তিনি বলেন, আমরা এখন ২০ থেকে ৩০ টাকা নেই বাসাপ্রতি। কোথাও কোথাও ৫০ টাকা নেওয়া হয় কারণ সব এলাকায় খেয়েপরে থাকার খরচ এক না। টেন্ডারে এটিকে ১০০ টাকা করা হবে শুনেছি। কিন্তু রাজনৈতিক লোকদের হাতে গেলে তারা এর থেকে বেশি নিলেও কারও কিছু বলার থাকবে না। দক্ষিণে অনেক ওয়ার্ডে এমন হচ্ছে। নতুন যারা কাজ পাবে তাদের ময়লা সংগ্রহের জন্য গাড়িসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কিনতে হবে। এগুলো তো মূলত নগরবাসীর টাকা থেকেই আসবে। কিন্তু আমাদের কাছে এগুলো আগে থেকেই আছে। কাজেই আমাদেরকে কাজ করতে দিলে খরচ কম হবে।

মানববন্ধনে কাজ না হলে প্রয়োজনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন লাকী।

এদিকে পিডব্লিউসিএসপি নেত্রীর বিভিন্ন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সংগঠনটির কাজে বিভিন্ন ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি করেন ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান। লাকীর বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রশ্নের সূত্র ধরে জানতে চাইলে প্রতিবেদককে এই কর্মকর্তা বলেন, আপনি কী তাদের সম্পর্কে জানেন? তাদের বাসাবাড়ি থেকে কত নেওয়ার কথা আর কত নেয়? তাদের কর্মীদের মান কেমন? তাদের গাড়িগুলোর মান কেমন? ময়লা সংগ্রহের এই কাজটিকে শৃংখলার মধ্যে নিয়ে আসতেই এমনটা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
এসএইচএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।