ঢাকা: রাজধানীর বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বেসরকারিভাবে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি)।
অন্যদিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আর্থিক অবস্থা এবং নগরবাসী উভয়ের প্রতি ‘সহানুভূতি’ থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
জানা যায়, গেল বছরের সেপ্টেম্বরে এক বোর্ড সভায় বর্জ্য সংগ্রহের কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএনসিসি। প্রায় একই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে কার্যকর করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বেসরকারি উদ্যোগে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে আসা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সংগঠন পিডব্লিউসিএসপি। সংগঠনটির দাবি, এমনটা করা হলে বেকার হয়ে পড়বে এর সাথে জড়িত প্রায় ১৯ হাজার (ঢাকার উত্তরে প্রায় ৯ হাজার) পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি। এই সাত দিনের মধ্যে টেন্ডার ব্যবস্থা বাতিল না করলে বা টেন্ডারে অংশ নেওয়ার শর্ত শিথিল না করলে ধর্মঘট করা হবে বলে জানানো হয়।
সংগঠনটির সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে আমরা এই কাজ করে আসছি। এখন আমাদের বাদ দিয়ে একটি বিশেষ মহলের স্বার্থে এই টেন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি এর আগেও মানববন্ধন করতে চেয়েছি। গেল ১২ তারিখ (১২ জানুয়ারি) মানববন্ধন করতে গেলে মেয়র আতিকুল ইসলাম স্যার আমাকে নিষেধ করেন। আমি করিনি। কিন্তু তিনি আমাদের কাজটি দিচ্ছেন না।
পিডব্লিউসিএসপি টেন্ডারে কেন অংশ নিচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, টেন্ডারে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলো পূরণ করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন। ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, টিন সার্টিফিকেট, ব্যাংক একাউন্ট—এগুলো চাওয়া হয়েছে। আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ; শহর ও মানুষের ময়লা পরিষ্কার করি। আমরা এগুলো পাব কই?
এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, বর্জ্য সংগ্রহের কাজে এতদিন কোনো নিয়ম-নীতি ছিল না। বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনেরও না। এটা নাগরিকদের দায়িত্ব যে, তারা ময়লা আমাদের এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন)-এ ফেলে যাবেন। সিটি কর্পোরেশনের আইনেই এমন আছে। কিন্তু নগরবাসী এমনটা না করায় বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন এসব কাজ করে আসছে। কিন্তু এগুলোকে আমরা একটি নিয়মের আওতায় আনতে চাই।
সেলিম রেজা আরও বলেন, ময়লার ব্যবসা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। তারা (পিডব্লিউসিএসপি) যে এই কাজ করছে, কে কত টাকা দিচ্ছে, সেই টাকা কই কই যাচ্ছে—কোনো হিসাব নেই। সরকার ও সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা একেক স্থাপনা থেকে নিজেদের মতো করে একেক রেটে ফি নেয়। নগরবাসীর স্বার্থেই সিটি কর্পোরেশন এটা করছে।
পিডব্লিউসিএসপি ধর্মঘট ডাকলে সেটা অযৌক্তিক হবে বলেও মনে করেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সেলিম রেজা বলেন, তাদের ধর্মঘট হবে অযৌক্তিক। তারা কাদের জন্য ধর্মঘট ডাকবে? পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য, তাই তো? তাহলে টেন্ডারের মাধ্যমে যারা কাজ নেবে, তারা তো এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়েই কাজ করাবে। এখানে তো পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কোনো ক্ষতি হবে না।
পিডব্লিউসিএসপি ধর্মঘট ডাকলে বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে নগরবাসীর ভোগান্তি হবে। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের পদক্ষেপ জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং নগরবাসী উভয়ের প্রতিই আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। আমরা নগরবাসীর সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। আমরা একটা নীতিমালা করছি তবে সেটা এখনও চূড়ান্ত না। নগরবাসীর জন্য উপকার হবে এমন ব্যবস্থাই আমরা নেব। তাদের তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চিঠি হয়তো তারা শিগগিরই পেয়ে যাবেন। কিন্তু তিন মাস পরে হলেও তাদের নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। তারা চাইলে টেন্ডারে অংশ নিয়ে যে কয়টি পারে সে কয়টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব নিক।
পিডব্লিউসিএসপি’কে টেন্ডারে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে টেন্ডারের শর্ত নিয়ে কোনো কথা থাকলে আলোচনার আহ্বান জানান ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা। তবে দীর্ঘ দিন চেষ্টা করেও সিটি কর্পোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পিডব্লিউসিএসপির সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকীর।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
এসএইচএস/এমজেএফ